
টানা ভারী বৃষ্টি আর ভয়াবহ ধসের জেরে গোটা উত্তরবঙ্গ কার্যত বিপর্যস্ত। এমনই সঙ্কটজনক পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে ২ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। কলকাতা ছাড়ার আগে নিজের সোশাল মিডিয়ায় যেমন বার্তা দিয়েছেন, তেমনি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের জন্য আপাতত কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত কিছু বিবরণ তুলে ধরেছেন সেখানে।
এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ”পুলিশ এবং প্রশাসন সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার ও পুনরুদ্ধারের কাজ করছে। কমিউনিটি রান্নাঘর খোলা হয়েছে, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং যেখানে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করার কথা, সেখানে আমাদের খরচে তা করা হবে। উত্তরবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ কর্পোরেশন এবং আমাদের অন্যান্য পরিবহণ সংস্থাগুলি আটকে পড়া পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিশেষ ভলভো এবং দূরপাল্লার বাসের ব্যবস্থা করছে।”

দুর্যোগে মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ করে টাকা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লিখেছেন, ”মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দেওয়া কখনই সম্ভব নয়, তবে আমরা প্রতিটি মৃতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা এবং বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিটি পরিবারের একজনকে একটি বিশেষ হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”
২ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে বিপর্যস্ত কিছু এলাকা পরিদর্শন করার কথাও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ”আমাদের প্রশাসন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সকলের জন্য মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেবে।” উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে একযোগে কেন্দ্র এবং ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, যদি কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গা-হুগলি নদীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পলি তোলার কাজ করত এবং ডিভিসি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের জলাধারের গভীরতা (পলি না তুলে) হ্রাস করতে না দিত তাহলে এমন ‘ম্যান মেড ফ্লাড’ হত না। দক্ষিণবঙ্গের মতোই উত্তরবঙ্গের জনগণও রক্ষা পেত।
সোশাল মিডিয়ার পোস্টে বিপর্যন্ত উত্তরবঙ্গের উদ্ধারকাজের কিছু ছবিও শেয়ার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, পুলিশের ডিজি ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছে গেছেন। মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য এবং জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়, বিশেষ করে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ এবং ত্রাণ বিতরণে তদারকি করছেন।

এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফর ঘিরেও রাজনৈতিক লড়াই শুরু হয়েছে জোর কদমে। দার্জিলিঙের পদ্ম সাংসদ রাজু বিস্তার চিঠির পর ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ ঘিরে তোপ দেগেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। উত্তরবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য শিলিগুড়ির মেয়র তথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক গৌতম দেবের উদ্দেশেই তোপ দেগেছেন শমীক। পদ্ম শিবিরের রাজ্য সভাপতির অভিযোগ, রাজ্যের কোনও বাজেট অধিবেশনেই উত্তরবঙ্গের জন্য কখনই কিছু চাননি গৌতম দেব। তাঁর আরও অভিযোগ, কেন্দ্রের জল জীবন মিশনের টাকাও সেই কাজে না লাগিয়ে অন্যত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
