
রাজস্থানের জয়পুরে রাজ্য পরিচালিত সাওয়াই মান সিং (এসএমএস) হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে রবিবার গভীর রাতে ভয়াবহ আগুন লাগে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘন ধোঁয়ায় যখন পুরো আইসিইউ ঢেকে যায়, তখন মরিয়া আত্মীয়রা নিজের হাতে রোগীদের, কেউ বিছানাসহ, কেউ কাঁধে তুলে বাইরে রাস্তায় নিয়ে আসেন।
নিহতদের মধ্যে ছয়জনের নাম পাওয়া গেছে— পিন্টু (সিকার), দিলীপ (আন্ধি, জয়পুর), শ্রীনাথ, রুক্মিণী, খুর্মা (তিনজনই ভরতপুর) ও বাহাদুর (সাঙ্গানের, জয়পুর)।
আগুন লাগার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুরো আইসিইউ এলাকা ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনার সময় হাসপাতালে ২১০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন, যার মধ্যে চারটি আইসিইউতে ছিল প্রায় ৪০ জন করে। প্রত্যেক আইসিইউতে রাতে মাত্র একজন করে কর্মী উপস্থিত ছিলেন, যারা আগুন লাগার পরপরই পালিয়ে যান বলে অভিযোগ।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হাসপাতাল প্রশাসনের মারাত্মক গাফিলতির কারণেই এই দুর্ঘটনা। আগেই ধোঁয়া দেখা যাওয়ার সতর্কবার্তা দেওয়া হলেও তা উপেক্ষা করা হয়, এবং আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই কর্মীরা পালিয়ে যান। তারা দাবি করেন, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র অকেজো ছিল এবং আগুনে পুড়ে যাওয়া বিছানাগুলোই ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষ্য বহন করছে।
সংবাদ সংস্থাকে এক ব্যক্তি, যার মা আগুনে মারা গেছেন, বলেন, “আইসিইউতে আগুন লাগে, কিন্তু তা নেভানোর কোনও ব্যবস্থা ছিল না। কোনও ফায়ার এক্সটিংগুইশার, সিলিন্ডার বা এমনকি জলের ব্যবস্থা পর্যন্ত ছিল না। কোনও সুবিধাই ছিল না। আমার মা বাঁচতে পারেননি।”

আরেকজন জানান, রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধোঁয়া দেখা গেলে চিকিৎসকদের জানানো হয়। “কিন্তু ধোঁয়া ক্রমশ ঘন হতে থাকে। ডাক্তার ও নীচে থাকা কর্মীরা তখনই পালিয়ে যান। কিছু রোগীকে আমরা নিজেরাই টেনে বের করি। আমার আত্মীয় পিন্টুও ভিতরে ছিল। সে ভালই ছিল, দু’এক দিনের মধ্যেই ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল,” বলেন তিনি।
অগ্নিকাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা, সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী যোগারাম প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জওহর সিং বেদম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। সেখানে নিহতদের পরিবার অভিযোগ করেন, আগুন লাগার সময় হাসপাতালের কর্মীরা পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রশাসন কোনও তথ্য দিচ্ছে না।
এক পরিবার সদস্য বলেন, “আমরা ধোঁয়া দেখে স্টাফদের জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা গুরুত্ব দেয়নি। আগুন লাগতেই প্রথমে তারাই দৌড়ে পালায়। এখন কেউ আমাদের রোগীদের খবরও দিচ্ছে না।”
অন্যদিকে, হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় বিকাশ জানান, “আমরা অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম, আগুনের খবর পেয়ে দৌড়ে যাই। তিন-চারজন রোগীকে উদ্ধার করতে পেরেছি। কিন্তু পরে আগুন এত বেড়ে যায় যে আর ভিতরে যাওয়া সম্ভব হয়নি।”
আরেক ভুক্তভোগী জানান, “আমি নীচে নেমে খেতে গিয়েছিলাম, তখনই আগুন লাগে। জানতেও পারিনি। আমার মা আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। আগুন নেভানোর কোনও সরঞ্জামই ছিল না। কিছুই ছিল না।”
রাজ্যের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতালে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা উন্মোচন করেছে। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।