
কৌন বনেগা ক্রোড়পতি কুইজ শো থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পুরস্কার জিতলেন মহারাষ্ট্রের এক প্রান্তিক চাষি কৈলাস কুন্তেওয়ার। ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলার পাইথানের বাসিন্দার পারিবারিক সম্পত্তি বলতে রয়েছে মাত্র ২ একর জমি। সংসারের খরচ সামাল দিতে তাই অন্যের জমিতেও কাজ করতে হয়। আর তা থেকেই মাঝে মধ্যে পূরণ করতে পারেন মা-বাবা, স্ত্রী এবং দুই পুত্রসন্তানের কোনও না কোনও চাহিদা। স্বভাবতই জনপ্রিয় টিভি শোয়ের ১৭তম সংস্করণে ৫০ লক্ষ টাকা জিতে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত কৈলাস কুন্তেওয়ার। বলেছেন, “আমাদের মতো মানুষের কাছে এত পরিমাণ অর্থ প্রাপ্তি অবিশ্বাস্য।”
কৌন বনেগা ক্রোড়পতির হট সিটে বসার সুযোগ অবশ্য সহজেই মেলেনি কৈলাস কুন্তেওয়ারের। এর জন্য তাঁকে কমবেশি দশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ৫০ লক্ষ টাকা জেতার আনন্দে তুলে ধরেছেন কুইজ শো-টির জন্য কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন সেই সমস্ত কাহিনি। জানিয়েছেন, কখনও বন্যা, কখনও খরার মোকাবিলা করেও স্বপ্ন দেখেছেন হট সিটে বসার। স্বভাবতই 2025 সালটি তাঁর কাছে তাই স্বপ্নপূরণের বছর। ২০১৫ সালে প্রথমবার মোবাইল ফোন কিনতে পেরেছিলেন কৈলাস। তখন নিজেদের এবং অন্যের জমিতে হাড়ভাঙা খাটুনির পর, ঘরে ফিরে দেখতেন ইউটিউবে থাকা কেবিসি-র পর্বগুলি। তখন কেবিসি ছিল তাঁর কাছে নিছক বিনোদন। যদিও প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অর্থ উপার্জনের ভবনা প্রথমবার তাঁর মাথায় আসে ২০১৮ সালে। হিঙ্গোলি জেলার একজন প্রতিযোগীকে হটসিটে বসে প্রশ্নের উত্তর দিতে দেখেই ভাবনাটা তাঁর মাথায় আসে। ফেসবুক ঘেঁটে পাশের জেলার কেবিসি প্রতিযোগীর ফোন নম্বর খুঁজে সরাসরি তাঁকে ফোন করেন। আলাপ জমিয়ে একটা সময়ে লম্বা ফোনকলে জেনে নেন কীভাবে হট সিটে বসা সম্ভব।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ ভাল ছিলেন কৈলাস কুন্তেওয়ার। পরিবারের দৈন্যদশার জন্য খুব বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। তবে মেধাবী কৈলাস যা যা পড়তেন কিংবা যা যা শুনতেন তা মনে রাখার অভ্যেস তৈরি করেছিলেন আগেই।হিঙ্গোলির প্রতিযোগীর পরামর্শ ও টিপস কাজে লাগিয়ে তারপরই শুরু করেন কেবিসি-র প্রস্তুতি। বলেছেন, “জমিতে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে কাজ করার পরে, বাড়ি ফিরে ইউটিউবে সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান দেখতাম। দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করতাম এটি নিয়ে। রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছিলাম কুইজ শোগুলি দেখে নানা বিষয়ে জ্ঞান বাড়িয়ে নেওয়ার।”৭ বছরের নিয়মিত অভ্যাস অবশেষে তাঁকে কেবিসির হট সিটে পৌঁছে দিয়েছে এবং পরিশ্রমের ফলস্বরূপ এনে দিয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা। পুরস্কারের টাকা দিয়ে তাঁর কী কী করার পরিকল্পনা জানতে চাইলে কুন্তেওয়ার বলেছেন, “আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শান্তভাবে চিন্তা করব। আমাদের সন্তানদের শিক্ষা সর্বদা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। একবার সেটি নিশ্চিত হয়ে গেলে, আমরা দেখব আর কী কী করতে পারি।”প্রান্তিক চাষি কুন্তেওয়ারের মাসিক রোজগার মেরেকেটে ৩,০০০ টাকা। নিজে যেমন ক্রিকেট ভক্ত, তেমনি তিনি তাঁর দুই ছেলেকেও ক্রিকেটার করার স্বপ্ন দেখেন। হট সিটে বসে ১৪ টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জিতে নেওয়া ৫০ লক্ষ টাকার একটা অংশ সন্তানদের খেলাধুলোর জন্যও ব্যয় করতে চান।
কৌন বনেগা ক্রোড়পতিতে ১৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে ১ কোটি টাকা জিততে পারতেন কৈলাস কুন্তেওয়ার। কিন্তু পরপর দুটি লাইফ লাইন ব্যবহার করেও উত্তর নিয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। তাই পদত্যাগ করে কেবিসি ১৭ থেকে জিতে নিয়েছেন ৫০ লক্ষ টাকা।