
একদিকে অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টি, অন্যদিকে সিকিম ও ভুটানের ছাড়া জল। দুয়ের ধাক্কায় প্লাবিত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের সেই আতঙ্ক কাটিয়ে এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের পথে উত্তরবঙ্গ। পাহাড়ে বৃষ্টি যেমন কমেছে, তেমনি সমতলে নদীর জলও নামতে শুরু করেছে। ফলে দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে আটকে পড়া বহু পর্যটক বাড়ি ফেরার জন্য মুখিয়ে।
পুজোর ছুটিতে ঘুরতে এসে প্রকৃতির রুদ্ররূপের দুঃসহ স্মৃতি কাটতে না কাটতেই, পর্যটকদের কাছে নতুন সমস্যা আকাশ কিংবা সড়কপথে অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বৃদ্ধি। সাধারণ সময়ে বাগডোগরা থেকে দমদমের বিমান ভাড়া থাকে ৪,৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকার মধ্যে। সেখানে গত সোমবার বিকেলের ফ্লাইটের ভাড়া ১৬,০০০ টাকা ছাপিয়েছে। শুধু তাই নয়, কিছু ফ্লাইটে উঠে কলকাতায় পৌঁছতে চাইলে দিতে হচ্ছে কমবেশি ৪০,০০০ টাকা। কারণ সেই উড়ানগুলি দিল্লি ঘুরে তবেই কলকাতায় যাচ্ছে।
সোমবার বাগডোগরা থেকে সরাসরি কলকাতা ফেরার সর্বোচ্চ টিকিটের দাম উঠেছিল ২৫ হাজার টাকা। দুর্যোগের সময় এমন অস্বাভাবাবিক হারে বিমান ভাড়া ঘিরে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। তবে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (DGCA) সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছে, উৎসবের মরশুমে বিমানের ভাড়া যাতে লাগামছাড়া না হয়, তার উপর নজর রাখা হচ্ছে। DGCA-এর বক্তব্য যে স্রেফ কথার কথা, তা ঘরে ফেরার জন্য মুখিয়ে থাকা পর্যটকরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।
আকাশপথে গলাকাটা ভাড়া যেমন চাওয়া হয়েছে, তেমনি পিছিয়ে ছিল না সড়কপথও। গত রবিবার দুপুরের পর পাহাড় থেকে শিলিগুড়ির কিছু রাস্তা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে গাড়ির খোঁজ শুরু করছিলেন আটকে পড়া পর্যটকরা। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেদার মুনাফা লোটার অভিযোগ উঠেছে পাহাড়ের গাড়িচালকদের একাংশের বিরুদ্ধে। পর্যটকদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে গাড়ি রিজার্ভের জন্য চাওয়া হয়েছে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা।
এমন অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় অনেকেই সেদিন পাহাড়ের হোটেলে থেকেছেন। আর যাঁরা সমতলে (শিলিগুড়ি) পৌঁছেছেন তাঁদের মধ্যেও অনেকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তবে পাহাড়ের গাড়ি চালকদের বক্তব্য, দার্জিলিং থেকে ভায়া কার্সিয়াং, পাঙ্খাবাড়ি রোড হয়ে শিলিগুড়ি নামতে হয়েছে। অনেকটা ঘুরে আসার কারণেই এমন বাড়তি ভাড়া চাওয়া হয়েছে। ঘুরপথে আসার জন্য যেমন বাড়তি সময় লেগেছে তেমনি যানজটের কারণে আটকেও থাকতে হচ্ছে অনেকক্ষণ।
অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টিতে একাধিক ভূমিধসের ফলে দার্জিলিং-শিলিগুড়ি রুটে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এর উপর কার্শিয়াং এবং রোহিণী হয়ে শিলিগুড়ির মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ফলে যানবাহনগুলিকে দীর্ঘ এবং যানজটপূর্ণ জাতীয় সড়ক-১১০ রুট ধরে যেতে হচ্ছে। আটকে পড়া পর্যটকদের পাশে সহয়তার হাত বাড়িয়েছে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের হস্তক্ষেপে কমেছে বাড়তি ভাড়া।

যানজটে আটকে পড়ে অনেক পর্যটকই তাঁদের নির্ধারিত ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ধরতে পারেননি। বাধ্য হয়েই সরকারি কিংবা বেসরকারি ভলভো বাসে কলকাতায় ফেরার ব্যবস্থা করেছেন। তবে বয়স্কদের নিয়ে বাসে ফেরাটা তাঁদের কাছে ছিল আতঙ্কের। যাঁরা বাসে ফিরতে পারেননি তাঁরা শিলিগুড়িতে অপেক্ষা করে পরবর্তী ট্রেনের বুকিং করতে দৌড়াদৌড়ি করেছেন।
উত্তরবঙ্গে থাকা মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা ফেরার জন্য বাড়তি সরকারি বাসের ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেইমতো সোমবার ২০টি এনবিএসটিসি বাস সহ প্রায় ৪৫টি বাস উত্তরবঙ্গের বন্যা কবলিত এলাকা থেকে প্রায় ২০০০ পর্যটককে কলকাতায় পৌঁছে দিয়েছে। এসপ্ল্যানেডে বাস থেকে নেমে আটকে থাকা যাত্রীরা স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন।