
উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে ঘন ঘন ভূমিধস ও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় সম্প্রতি একাধিক ধসে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিবেশবিদদের মতে, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পেছনে বড় কারণ হল বাড়তে থাকা পর্যটকের সংখ্যা, দ্রুত পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং অবৈধ নদীতল খনন।
পর্যটনের চাপেই পাহাড়ের ভারসাম্য নষ্ট
দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, কার্শিয়াং— এই সব জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে ক্রমশ বাড়ছে পর্যটকদের সংখ্যা। তাদের প্রয়োজন মেটাতে হোটেল, হোমস্টে ও রিসর্ট তৈরির হিড়িক পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই পাহাড় কেটে গড়ে উঠছে একের পর এক বিলাসবহুল আবাসন, যা এলাকার সংবেদনশীল মাটি ও ভূগঠনকে আরও অস্থিতিশীল করছে।
পরিকাঠামো প্রকল্পে পাহাড়ে ছেদ
সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্প, নতুন সড়ক সম্প্রসারণ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প— সবমিলিয়ে পাহাড়ের বুকে চলছে অবিরাম খোঁড়াখুঁড়ি। তিস্তাসহ একাধিক নদীর গতিপথে কৃত্রিম পরিবর্তন ঘটছে, যা বৃষ্টির সময় অতিবর্ষণে বন্যার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
নদীতল খননে বাড়ছে বিপদ
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অবৈধ নদীতল খননের ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধা পাচ্ছে। ফলে ভারী বৃষ্টিতে জলস্তর দ্রুত বেড়ে উপচে পড়ছে আশপাশের এলাকা জুড়ে। এতে ধসের ঝুঁকিও অনেকটা বেড়ে যাচ্ছে।
অরণ্যচ্ছেদন ও আধুনিক স্থাপত্যও দায়ী
পাহাড় কেটে নতুন বসতি গড়ে ওঠার পাশাপাশি ব্যাপক হারে গাছপালা কাটা হচ্ছে। প্রচলিত কাঠ ও পাথরের ঘরের বদলে এখন পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের বিল্ডিং। পরিবেশবিদদের দাবি, এই স্থাপত্য পরিবর্তন স্থানীয় জলধারার প্রবাহ ও মাটির ধারণক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
পরিবেশবিদ ও ভূতত্ত্ববিদদের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে এখনই সুপরিকল্পিত উন্নয়ন নীতি কার্যকর না করা হলে বড় ধরনের বিপর্যয় আসন্ন। তাঁরা পর্যটন ও নির্মাণ প্রকল্পের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, নদী ও বন সংরক্ষণ আইনের কার্যকরী প্রয়োগ এবং পাহাড়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশগত অনুমোদন বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন।