
দেশের সাংস্কৃতিক এবং পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কলকাতা। আর সেই শহরের রিয়েল এস্টেট বাজারের নজরকাড়া ছবি উঠে এসেছে সম্প্রতি। বৃহত্তর কলকাতায় অফিস স্পেসের ভাড়া বেড়েছে রেকর্ড পরিমানে। শুধু তাই নয়, দেশের এই মেট্রো শহরটিতে, অফিস স্পেস লিজিংয়ের ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব বৃদ্ধিও ধরা পড়েছে।
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায় ২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে(July-Sept quarter) প্রায় ০.৬ মিলিয়ন বর্গফুট অফিস স্পেস লিজ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বৃহত্তর কলকাতায় প্রথম ৯ মাসে লিজ দেওয়া জায়গার পরিমান ১.৫ মিলিয়ন বর্গফুটে পৌঁছেছে, যা এই সময়ের মধ্যে একটা রেকর্ড।
অফিসের জন্য জায়গা ভাড়া তথা লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে আইটি তথা তথ্য-প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি। জুলাই-সেপ্টেম্বরে মোট লিজ নেওয়া জায়গার প্রায় ৬০% ছিল এদের দখলে। Research, Consulting Firms এবং Analytics firms- এর লিজ নেওয়া জায়গা শতাংশের হিসেবে ১৪। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি লিজ নেওয়া জায়গা ছিল ১১%।
এত চাহিদা সত্ত্বেও, বৃহত্তর কলকাতার অফিসের জন্য নির্মিত ভবনগুলি কিন্তু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। গ্রেড এ অফিস ভবনগুলিতে (সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন) জায়গার অভাব ধরা পড়েছে। চাহিদা বেশি থাকা সত্ত্বেও, ভাড়া কিংবা বিক্রয় মূল্য কিন্তু দেশের অন্যান্য প্রধান শহরগুলির তুলনায় এখানে বেশ কম।
এই বৈষম্যের জন্যেই অফিস স্পেস নির্মাণের কাজ বাধা পেয়েছে। জমির দাম বৃদ্ধি নতুন বাণিজ্যিক প্রকল্পগুলি তৈরিতে বাধা দিচ্ছে। ফলে ডেভেলপাররা বাণিজ্যিক অফিস স্পেসের তুলনায় আবাসিক প্রকল্পগুলিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ সেখানে জায়গা কম থাকা সত্ত্বেও ভাড়া বেশি। স্বভাবতই ডেভেলপারদের লাভের অঙ্কটাও বেশ সন্তোষজনক।
CREDAI কলকাতার সভাপতি অপূর্ব সালারপুরিয়া বক্তব্য, কলকাতা বছরে ২০ লক্ষ বর্গফুট অফিস লিজ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আর সেটা যদি এ বছর নাও হয়, তাহলে আগামী বছর অবশ্যই তা পূর্ণ করবে। তাঁর দাবি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনেক অফিস বেশি করে জায়গা ভাড়া নিচ্ছেন। যাতে কলকাতার কর্মীরা, বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদের পরিবর্তে এখানেই তাঁদের সুবিধামতো কাজ করতে পারেন।
CREDAI পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি সুশীল মোহতাও অফিস স্পেস লিজিং নিয়ে বেশ আশাবাদী। তাঁর দাবি, আগামী বছর বৃহত্তর কলকাতায় প্রতি বর্গফুট অফিস স্পেসের দাম পাঁচ অঙ্কের হবে। তখন ডেভেলপাররা আবার অফিস স্পেস নির্মাণের দিকে ঝুঁকবেন।
জাতীয় পর্যায়ে, ২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে ৫৯.৬ মিলিয়ন বর্গফুট অফিস স্পেস লিজ দেওয়া হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিই বেশি জায়গা নিয়েছে। অফিস লিজিং কার্যকলাপের সর্বোচ্চ অংশে রয়েছে আইটি সেক্টর।
দেশের মধ্যে অফিসের জন্য জায়গা নেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে বেঙ্গালুরু। সেখানে মোট স্থানের ২৫%, যার মধ্যে ১৫.১ মিলিয়ন বর্গফুট লিজ তথা ইজারা দেওয়া হয়েছে। মুম্বই এবং দিল্লি-যথাক্রমে ১০.৬ মিলিয়ন এবং ১০.২ মিলিয়ন বর্গফুট ইজারা দেওয়া হয়েছে। এই তিনটি শহরের অফিস স্পেস ভারতে সামগ্রিক অফিস লিজিং কার্যকলাপের ৬১%।

গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (GCC) অফিস চাহিদা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা মোট লিজের প্রায় ৩৯%। তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা, ব্যাঙ্কিং, আর্থিক পরিষেবা এবং বীমা কোম্পানিগুলি সম্মিলিতভাবে লিজিং নিয়েছে ৬০%।
জাতীয় পর্যায়ের বিচারে কিন্তু নজরকাড়া ফল বৃহত্তর কলকাতায়। কারণ ২০২৪ সালেই বাণিজ্যিক জায়গা তথা অফিস স্পেসের নিরিখে এই শহর ছিল একেবারে পেছনের সারিতে। সেখান থেকে দুহাজার পঁচিশের প্রথম ৯ মাসে রেকর্ড অফিস স্পেস লিজিং।