
উত্তরবঙ্গে টানা ভারী বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট প্রবল বন্যায় বিপর্যস্ত বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীদের জীবন। শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের একাধিক বনাঞ্চল জলে ডুবে গেছে। বন দফতরের এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, হ্যামিলটনগঞ্জ (বক্সা পশ্চিম), জলপাইগুড়ি ডিভিশনের বনাঞ্চল, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের শিসামারা অঞ্চল এবং গরুমারা জাতীয় উদ্যানে জলবন্দি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
রাজ্যের প্রধান বন্যপ্রাণ সংরক্ষক সন্দীপ সুন্দরিয়াল বলেন, “আমাদের বনাঞ্চলের পরিকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে পথভ্রষ্ট প্রাণীদের উদ্ধার করা।” গরুমারার দক্ষিণ ডিভিশনের মেডনিয়া বিট এলাকায় একটি গন্ডারের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। অন্য একটি গন্ডার রামশাল গ্রামে ঢুকে পড়লে বনকর্মীরা সেটিকে উদ্ধার করেন। গন্ডারটিকে বনাঞ্চলে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
জালঢাকা নদীর পাড়ে বন্যার জলে আটকে পড়ে প্রায় ৩০টি হাতির একটি দল। ওই দলের মধ্যে হস্তি শাবকরাও আছে। বনকর্মীরা জানিয়েছে, শনিবার রাত থেকেই তারা আটকে রয়েছে। উদ্ধারকারী দল তাদের অন্য পথ দিয়ে বনে ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি জানান, মোট ৬টি গন্ডার বন্যার জলে ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি গরুমারায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আরেকটি গ্রাম থেকে উদ্ধার হয়েছে। জলদাপাড়ায় চারটি গন্ডার তোর্সা নদীর জলে আটকে ছিল। এর মধ্যে দুটি মূল ভূখণ্ডে ফিরে এসেছে। একটি গন্ডার ১০ কিলোমিটার ভেসে কোচবিহারের ঘোকসাডাঙ্গার দিকে চলে গেছে, আর একটি এখনও নিখোঁজ। এছাড়া একটি ভারতীয় গাউরকেও উদ্ধার করা হয়েছে।
জলদাপাড়া বন্যপ্রাণ ডিভিশনের ডিএফও প্রবীণ কাসওয়ান জানান, উদ্ধারকারী দল ও কুনকি হাতির দলকে কাজে নামানো হয়েছে। তিনি বলেন, “তোর্সা নদীর তীরেই মূলত গন্ডারদের বসবাস। নদীর জল বিপজ্জনক মাত্রায় প্রবাহিত হওয়ায় তারা বিপদে পড়েছে”। পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে জলঢাকা, তোর্সা ও কালজানি নদীর জল বেড়ে গেছে। নোরা ও ডায়ানা নদীর জলও বিপদসীমার ওপরে।
হলং নদীর ওপর থাকা কাঠের সেতু ভেসে গেছে, যার ফলে টুরিস্ট লজের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। কলকাতা থেকে আসা ছয়জন পর্যটককে কুনকি হাতির সাহায্যে উদ্ধার করা হয়েছে। জল নামলে আরও প্রাণীর মৃতদেহ মিলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বন দফতর।