
কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক মঙ্গলবার এক কর্মশালার আয়োজন করে, যেখানে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, সরকারি দফতর এবং কয়েকটি রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা অংশ নেন। উদ্দেশ্য ছিল—তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী কনটেন্ট অপসারণ (takedown) নির্দেশ ও নোটিশ জারির প্রক্রিয়া ও সীমা স্পষ্ট করা।
মন্ত্রকের সচিব এস কৃষ্ণন জানান, ‘Management of Information on Intermediary Platforms’ শীর্ষক এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিল মন্ত্রক ও দফতরগুলিকে আইটি আইনের ধারা ৭৯(৩)(বি) ও ৬৯এ সঠিকভাবে প্রয়োগের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া। তিনি জানান, বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা তথ্য অপসারণ সংক্রান্ত নোটিশে ভুল শব্দচয়ন বা বিন্যাসে ভুল করেছেন, সেই কারণেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কৃষ্ণন বলেন, “অনেকে ‘take down’ শব্দটা খুব সহজভাবে ব্যবহার করেন। কিন্তু নোটিশে বলা উচিত—যদি মধ্যস্থতাকারী (intermediary) কনটেন্ট না সরায়, তাহলে তার কী ফলাফল হবে। এটা সরাসরি ‘তুমি এটা সরাও’ বলার থেকে ভিন্ন। অনেক সময় কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ভুল করেন, তাই আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি কী বলা যায় আর কী বলা উচিত নয়।”
আইটি আইনের ধারা ৭৯(৩)(বি) অনুযায়ী, নোডাল অফিসার বা সংস্থা কেবলমাত্র অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বেআইনি কনটেন্ট সম্পর্কে মধ্যস্থতাকারী সংস্থাগুলিকে সতর্ক করতে পারেন, সরাসরি ব্লক করার নির্দেশ দিতে পারেন না। এই নোটিশগুলো কেবল জানায় যে কনটেন্ট না সরালে সংস্থাটি আইনি সুরক্ষা (safe harbor) হারাতে পারে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আদালতের।
এই ধারা ও আইটি রুলস, ২০২১-এর নিয়ম ৩(১)(ডি) অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, রাজ্য সরকার, পুলিশ বিভাগ, এবং সংস্থা যেমন ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার ও ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র কর্মকর্তারা এমন নোটিশ পাঠাতে পারেন। দেশে বর্তমানে শত শত কর্মকর্তা এই ক্ষমতা প্রাপ্ত নোডাল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।
অন্যদিকে, কনটেন্ট ব্লক করার ক্ষমতা শুধুমাত্র মন্ত্রকেরই রয়েছে, যা ধারা ৬৯এ অনুযায়ী কার্যকর হয়। এই ধারায় বলা হয়েছে—জাতীয় নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা বা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আশঙ্কা সৃষ্টি করলে সরকার অনলাইন কনটেন্ট ব্লক করতে পারে।

সম্প্রতি এক্স কর্প বনাম ভারতের ইউনিয়ন মামলায় (কর্ণাটক হাইকোর্ট) দেখা যায়, রেল মন্ত্রক ধারা ৭৯(৩)(বি)-এর অধীনে এক্স-কে একটি নোটিশ পাঠিয়েছিল, যেখানে এক মহিলার রেললাইনে গাড়ি চালানোর ভিডিও-সংক্রান্ত একাধিক লিংক সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। ওই নোটিশে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের লিংকও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২৬ জুন, ২০২৫ তারিখে জারি ওই নোটিশে লেখা ছিল, “এই ভিডিও শুধু নৈতিক মানদণ্ডের বিরোধী নয়, বরং x.com-এর নিজস্ব নীতিমালারও লঙ্ঘন। এমন ভিডিও শেয়ার করলে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে বা আত্ম-ক্ষতির প্রবণতা বাড়তে পারে। সুতরাং সংযুক্ত লিংকগুলো অবিলম্বে সরানোর জন্য বলা হচ্ছে।”
কর্মশালায় মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (সাইবার আইন) অজিত কুমার বলেন, “ভুলভাবে লেখা নোটিশগুলি প্রায়ই আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তাই একক ও মানসম্মত পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।”
কৃষ্ণন জোর দিয়ে বলেন, “নোটিশে সঠিক আইনি ধারা উল্লেখ থাকা, পরিষ্কার ভাষায় লেখা ও ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ না রাখা অত্যন্ত জরুরি।”
কর্মশালায় বিচার বিষয়ক দফতর, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিভিন্ন মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়—নির্ভুল ভাষা ব্যবহার, আইনি বিধান স্পষ্টভাবে উল্লেখ, এবং সব নোটিশে সামঞ্জস্য বজায় রাখার বিষয়ে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার আশা করছে যে ভবিষ্যতে কনটেন্ট অপসারণ সংক্রান্ত নোটিশ আরও আইনসম্মত, সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছভাবে জারি করা হবে।