
কাতার এয়ারওয়েজের এক ফ্লাইটে মর্মান্তিক ঘটনা। দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হল ৮৫ বছর বয়সী ডা. অসোকা জয়াওয়েরা নামের এক নিরামিষাসি যাত্রীর। কারণ তাঁকে নিরামিষ খাবারের বদলে মাংসযুক্ত খাবার দিয়ে ‘মাংসটা বাদ খেতে’ বলা হয়েছিল। তাতেই বিপত্তি।
ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ৩০ জুন, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে কলম্বো যাওয়ার কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে। ডা. জয়াওয়েরা আগেই নিরামিষ খাবার অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু ফ্লাইটে তাঁকে জানানো হয়, নিরামিষ খাবার নেই। পরিবর্তে তাকে একটি সাধারণ মাংসযুক্ত খাবার দিয়ে বলা হয়, “মাংসটা বাদ দিয়ে খেয়ে নিন।”
এই খাবার খাওয়ার সময়ই তিনি হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ফ্লাইট ক্রু এবং মেডিকেল টিম চেষ্টা চালালেও তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হয়। জরুরি অবতরণের জন্য বিমানটি স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় নামানো হয়। সেখানকার হাসপাতালে নিয়ে গেলে ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া’ অর্থাৎ খাবার বা তরল পদার্থ শ্বাসনালিতে ঢুকে ফুসফুসে সংক্রমণ হয়ে মৃত্যু হয়েছে।
এই ঘটনার পর ডা. জয়াওয়েরার ছেলে, সূর্য জয়াওয়েরা, কাতার এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় তিনি অভিযোগ করেছেন, এয়ারলাইন নির্ধারিত নিরামিষ খাবার সরবরাহে ব্যর্থ। জরুরি অবস্থায় সঠিকভাবে চিকিৎসা সহায়তাও দেয়নি। ১,২৮,৮২১ ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তিনি।
‘মন্ট্রিয়াল কনভেনশন’ অনুযায়ী এই মামলাটি দায়ের হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যা বিমানে দুর্ঘটনার কারণে যাত্রীদের মৃত্যু বা আহত হওয়ার ক্ষেত্রে বিমান সংস্থার দায় নির্ধারণ করে।
এই ঘটনা আবারও সামনে নিয়ে এল , বিমানে বিশেষ খাদ্যাভ্যাস বা অ্যালার্জি থাকা যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত সতর্কতা ও পরিষেবার প্রশ্ন। এর আগেও কাতার এয়ারওয়েজে এমন ঘটনা ঘটেছে। ব্রিটিশ রিয়েলিটি তারকা জ্যাক ফাউলার প্রায় মৃত্যুর মুখে পড়েছিলেন। তাকে বাদামসহ চিকেন কারি পরিবেশন করা হয়।
অন্যান্য এয়ারলাইনেও একই ধরনের সমস্যা দেখা গেছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সামুদ্রিক খাবারে অ্যালার্জি থাকা এক মহিলাকে চিংড়ি খেতে দেওয়ায় মাঝপথে জরুরি অবতরণ করতে হয়। এই সব ঘটনা প্রমাণ করে দিচ্ছে, যাত্রীদের খাদ্য সংক্রান্ত তথ্য ও নিরাপত্তাকে আরও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি, বিশেষ করে বয়স্ক বা অ্যালার্জি আক্রান্ত যাত্রীদের ক্ষেত্রে।