
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়েছে। কাবুল ও পাখতিকা প্রদেশে পাকিস্তানি বিমান হামলার জবাবে আফগান তালিবান বাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে অন্তত ১৫ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে কাবুল। এই ঘটনায় দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে সংঘর্ষের নেতৃত্ব দেন তালিবান বাহিনীর কমান্ডার মহম্মদ কাসিম রিয়াজ। তিনি সংবাদমাধ্যমে জানান, “পাকিস্তানের আগ্রাসনের জবাব দিতে আমরা সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযানে নামি। তিনটি সেনা ঘাঁটি দখল করা হয়েছে এবং বিপুল অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।”
তালিবান মুখপাত্র আরও বলেন, “যদি পাকিস্তান আবারও আফগান ভূমিতে প্রবেশ করে বা বিমান হামলা চালায়, তবে আরও কঠোর জবাব দেওয়া হবে।”
গত বুধবার রাতে পাকিস্তানি বিমান বাহিনী কাবুল, পাখতিকা ও খোস্ত প্রদেশে একাধিক স্থানে আঘাত হানে। পাকিস্তানের দাবি, এসব এলাকায় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটি রয়েছে।
আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রক অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান এই হামলার মাধ্যমে তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে এবং সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফ বলেন, “আমরা বহুবার কাবুল সরকারকে সতর্ক করেছি, কিন্তু তারা টিটিপি-কে থামাতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমরা নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছি।”
তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, পাকিস্তান প্রয়োজনে সীমান্ত এলাকায় আরও বিমান হামলা বা ‘টার্গেটেড অপারেশন’ চালাতে পারে। এরপরই পাল্টা জবাব দিল আফগানিস্তান।
দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ ও পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষে আফগানিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান সীমান্তের হেলমান্দ, কান্দাহার, কাবুল, পাখতিয়া ও নাঙ্গরহার প্রদেশে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রাষ্ট্রসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের পক্ষ থেকে দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক মহল আশঙ্কা করছে, পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ইতিমধ্যেই অবিশ্বাসে ভরা। আফগানিস্তানে তালিবান শাসনের পর থেকে সীমান্ত নিরাপত্তা, শরণার্থী ও জঙ্গি আশ্রয়ের মতো ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে বারবার সংঘাত দেখা দিয়েছে।
যদি এই সংঘাত এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তবে তা পুরো অঞ্চলের জন্য বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ শুধু দুই দেশের নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ভারসাম্যের জন্য নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। কূটনৈতিক আলোচনার বদলে যদি সামরিক প্রতিশোধই পথ হয়ে ওঠে, তবে শান্তি ফেরার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হবে।