
আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির দিল্লি সফর ঘিরে নতুন বিতর্ক। শনিবার রাজধানীর আফগান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন উঠছে, ভারত কি এই ধরনের লিঙ্গভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা “অনুমোদন” করেছিল, নাকি এটি পুরোপুরি তালিবান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছিল?
ভারতের বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, তালিবান প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ভারত সরকার এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল না।
এই ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। অনেকেই বলেছেন,“ভারতের মাটিতে মহিলা সাংবাদিকদের এমনভাবে বঞ্চিত করা সংবিধান ও গণতন্ত্রের চেতনাকে অপমান করা।”
ভারতের বিদেশমন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আফগান বিদেশমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন আমরা করিনি। এটি সম্পূর্ণভাবে আফগান দূতাবাসের একটি আভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠান ছিল, যেখানে ভারতের কোনো সরকারি ভূমিকা ছিল না।”
অর্থাৎ ভারত সরাসরি এই ‘জেন্ডার ব্যান’ অনুমোদন করেনি, এবং কূটনৈতিক নিয়ম অনুযায়ী এমন কোনও অনুষ্ঠান দূতাবাসের নিজস্ব সিদ্ধান্তে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক আইন অনুযায়ী, বিদেশে কোনও দেশের দূতাবাস সেই দেশের সার্বভৌম এলাকা হিসেবে গণ্য হয়। অর্থাৎ, আইন অনুযায়ী এক্ষেত্রে ভারত, আফগান দূতাবাসের কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করতে পারে না বা কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না।
ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, দূতাবাসের অভ্যন্তরে কী হবে, কারা প্রবেশ করবে, সেই সিদ্ধান্ত দূতাবাসই নেবে। তাই আইনত, ভারত এই নিষেধাজ্ঞা আটকানোর ক্ষমতা রাখে না।
ভারতের সংবিধানের ১৪ ও ১৯ অনুচ্ছেদে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ এবং সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এই সাংবিধানিক সুরক্ষা ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতরে প্রযোজ্য হলেও, কোনও বিদেশি দূতাবাসের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে তা সরাসরি প্রয়োগ করা যায় না। ফলে, আইনগতভাবে ভারত এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেনি — যদিও নৈতিক দিক থেকে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এই ঘটনার পর বহু মহিলা সাংবাদিক, মানবাধিকার সংগঠন এবং বিরোধী নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স-এ লেখেন, “ভারতের রাজধানীতে মহিলা সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করা শুধু লজ্জাজনক নয়, এটি গণতন্ত্রের মূলনীতির প্রতি অবমাননা।”
প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া এবং এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “ভারতের মাটিতে এমন বৈষম্যমূলক আচরণ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।”
সমালোচকরা বলছেন, হস্তক্ষেপ না করলেও ভারতের নৈতিক দায়িত্ব ছিল এমন বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে অন্তত প্রতিবাদটুকু করা, কিংবা ভবিষ্যতে এ ধরনের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া।
দূতাবাসের কার্যক্রমে আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে ভারত সরাসরি এই “জেন্ডার ব্যান” বন্ধ করতে পারেনি। তবুও, এটি দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নারীর সমান অধিকারের প্রশ্নে এক গভীর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।