
দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রী নির্যাতনকাণ্ডে এবার কড়া ভূমিকা নিল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি শম্পা দত্ত পালের নির্দেশে পুলিশকে হাসপাতালের ভিতরে ও বাইরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে বলা হয়েছে। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, আপাতত কোনও বহিরাগত ব্যক্তির প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই মেডিক্যাল কলেজেই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন নির্যাতিতা ছাত্রী। তাঁর পাশাপাশি রয়েছেন একাধিক সাক্ষী, সহপাঠী এবং চিকিৎসকও। ঘটনার পর থেকেই বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশে আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়েছিল হাসপাতাল চত্বরে। অভিযোগ, প্রতিদিন প্রচুর বাইরের লোকজন বিনা বাধায় ঢুকে পড়ছিলেন হাসপাতালে, যা নির্যাতিতা এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে আদালতের শরণাপন্ন হয়। অবকাশকালীন বেঞ্চে আবেদন জানিয়ে তারা জানায়, পুলিশি পাহারার অভাব এবং বহিরাগতদের উপস্থিতি হাসপাতালের পরিবেশকে অস্থির করে তুলছে। শুনানির সময় কলেজের পক্ষের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় আদালতকে জানান, হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষায় অবিলম্বে পুলিশ পিকেট বসানো জরুরি। বিচারপতির নির্দেশে দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি দুর্গাপুরে ধরনা শুরু করেছিল ১৩ অক্টোবর থেকে। প্রথমদিকে পুলিশ ধরনা কর্মসূচিতে বাধা দিলেও পরে আদালতের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। আদালতে বিজেপির আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য জানান, তারা যথাযথভাবে ধরনার অনুমতি পেয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ নানা অজুহাতে কর্মসূচি ব্যাহত করার চেষ্টা করে। আদালত এই যুক্তি মেনে নিয়ে পুলিশকে নির্দেশ দেয় আইন মেনে ধরনার অনুমতি দিতে এবং সহযোগিতা করতে।
ফলত, আদালতের অনুমতি অনুযায়ী বিজেপি এখন ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ধরনা চালিয়ে যেতে পারবে। দুই দিকেই আদালতের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে বলে মনে করছে প্রশাসন। একদিকে হাসপাতাল চত্বরে কঠোর নিরাপত্তা, অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আইনসম্মত স্বাধীনতা এই দুই পদক্ষেপেই আদালতের ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করছেন অনেকেই।
কলকাতা হাই কোর্টের এই নির্দেশের পর দুর্গাপুর মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তা জোরদার করতে শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ। প্রশাসনের দাবি, কোনওভাবেই যাতে নির্যাতিতা বা সাক্ষীদের উপর কোনও প্রকার চাপ বা প্রভাব খাটানো না হয়, তা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।