
সেই যে কথায় আছে না, প্রদীপ নেভার আগে দপ করে জ্বলে ওঠে। শনিবারের বারবেলায় আসলে কি সেই অন্তিম স্ফুলিঙ্গেরই সাক্ষী থাকল সিডনি? অস্ট্রেলিয়া মাটিতে অন্তিম নাকি নিজেদের কেরিয়ারেরই অন্তিম ম্যাচ খেলে ফেললেন রো-কো, তা অস্পষ্ট এখনও। তবে সব তত্ত্বকেই এ দিন কার্যত ছাপিয়ে গেল দুই মহারথীর অতিমানবীয় জেদ।
প্রথমে ব্যাট করে অজিদের মাত্র ২৩৬ এই গুটিয়ে যাওয়া। এরপর সাড়ে ১১ ওভার বাকি থাকতেই ভারতের ৯ উইকেটে জয়, আর তার জেরে ০-৩ চুনকাম এড়ানো। এ সবকিছুই এ দিন গৌণ। সত্যি হয়ে থাকল শুধুমাত্র ১২১ এবং ৭৪ রানের দুটো অপরাজিত ইনিংস। আসলে যা ইনিংসই নয়। মহাকাব্য। মণিমুক্তে ঠাসা ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে যোগ করে দিল আরও একটি চিরস্মরণীয় অধ্যায়।
রূপকথার গল্পের মতো ফিরে আসার ঘটনা তো ভারতীয় ক্রিকেটে কতই আছে। তবে এ ব্যাপারে রোহিতকে যদি এবার থেকে সুপিরিয়র ধরা হয়, আপত্তি করার উপায় থাকছে কি? কেরিয়ারের ৩৩ তম শতরান হাঁকিয়ে সিডনিতে সিংহাসনচ্যুত হিটম্যান শুধু ম্যাচের সেরাই নন, তিন ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি (২০২) রান করে ছিনিয়ে নিলেন সিরিজের সেরার পুরস্কারও। যদিও এরপরেও টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে তাঁকে আবার দেখা যাবে কি না তা কেউ জানে না।
ম্যাচ শেষে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রোহিত কিংবা বিরাট অবশ্য এমন কোনও ইঙ্গিত দেননি যাতে মনে হতে পারে এ বার ব্যাগপত্র গোছাতে শুরু করবেন তাঁরা। কথোপকথন শেষে দুজনেই মাঠে উপস্থিত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সমর্থকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সেটা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলার কারণে বলেই মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রো-কো’র মনে কী চলছে? আরও বড় প্রশ্ন, আজ থেকে গুরু গম্ভীর এবং নির্বাচকরা ঠিক কী চোখে দেখবেন দুই মহারথীকে? দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবটা যতখানি দুর্বোধ্য, অন্ততঃ আপাতত না মেনে উপায় নেই যে, প্রথমটিও ঠিক ততখানিই। ২০২৭ আসতে এখনও ঢের দেরি। তার আগে এমন গৌরবময় ফেয়ারওয়েলের সুযোগ রো-কো বার বার পাবেন কি? যেমনটা এ দিন প্লেটে করে সাজিয়ে দিল সিডনি। ২৩৬ করেও ওডিআই ম্যাচ জেতার ক্ষমতা আর কোনও দলের থাক বা না থাক অস্ট্রেলিয়ার সব সময়েই আছে। কিন্তু এদিন দুই অতিমানবের সামনে কিছুই করার ছিল না তাদেরও।
জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ইনিংসে (টেস্টে অবশ্য) ৭৪ করেছিলেন শচীন তেন্ডুলকর। অদৃষ্টের কী আশ্চর্য বিধান, পর পর দুই ম্যাচে শূন্য রানের পর এ দিন কোহলির খাতাতেও ৭৪। বিরাটের মাথায় কি একবারের জন্য হলেও পরিসংখ্যানের এই তথ্যটা এসেছে? কিংবা কেউ কি তাঁকে জানিয়েছে? আজ তিনি এবং রোহিত বাজিমাত করলেন নিজেদের অতিমানবীয় জেদ দিয়ে। Form is temporary but the class is permanent— কথাটা প্রমাণ করে দিলেন আরও একবার। কিন্তু রোজ রোজ এমনটা হবে কি? তাও বছরের বেশিরভাগ সময়টাই ২২ গজের থেকে দূরে থেকে, শুধুমাত্র হাতেগোনা কয়েকটা ৫০ ওভারে ম্যাচ খেলে। কে জানে, কী চলছে রো-কো’র মনে।
