
আগামীকাল, মঙ্গলবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের আরও ১১টি রাজ্যে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সোমবার এই ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর এই কর্মসূচি আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে এমন রাজ্যগুলিতে প্রথমে শুরু হচ্ছে। বাংলাতেও এই প্রক্রিয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বহু কেন্দ্রেই আগামী ভোটের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা কমিশনের কাছে এখন অগ্রাধিকার।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এই বিশেষ সংশোধনের প্রথম ধাপ। এই সময়ে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা, মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া এবং ঠিকানা বা বয়স সংক্রান্ত ভুল সংশোধনের কাজ হবে। রাজ্যের বিভিন্ন ব্লক ও ওয়ার্ডে বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও) ঘুরে ঘুরে যাচাই করবেন প্রতিটি পরিবারের ভোটার তালিকা।
রাজ্যে এই ঘোষণার আগেই প্রশাসনে বড়সড় রদবদল হয়েছে। নবান্নের নির্দেশে ৬৪ জন আইএএস আধিকারিকের বদলি হয়েছে, পাশাপাশি ১০ জেলার জেলাশাসকও পরিবর্তিত হয়েছেন। বদলি করা হয়েছে একাধিক এসডিও, এডিএম ও ডব্লিউবিসিএস আধিকারিককেও। যদিও রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে এটি রুটিন বদলি, কিন্তু অনেকের মতে আসন্ন ভোটকে কেন্দ্র করেই এই পুনর্বিন্যাস।
এদিকে, বাঁকুড়া, নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই এসআইআর নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকে কয়েকশো “ভূতুড়ে ভোটার” থাকার অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি বিধায়ক। তবে শাসক দল তৃণমূল জানিয়েছে, কমিশনের কাজ করতে গিয়ে অরাজকতা তৈরি করছেন বিরোধীরা। নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জে আরও এক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে অভিযোগ উঠেছে যে পরিবারের নামই ভোটার তালিকায় নেই, সেই পরিবারের একজনকেই বিএলও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, বারবার জানানো হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী কয়েকদিন রাজ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, আবহাওয়া পরিস্থিতি নির্বিশেষে এসআইআর প্রক্রিয়া চলবে। কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে মঙ্গলবার থেকেই শুরু হবে কাজ।
এছাড়া রাজ্যজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে কমিশন ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারদের বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিটি ব্লক অফিসে তৈরি হচ্ছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ। অভিযোগ জানানোর জন্য চালু করা হয়েছে বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর ও ইমেল।
রাজনৈতিক মহলে এখন চর্চা, এই বিশেষ নিবিড় সংশোধন রাজ্যের আগামী বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতির প্রথম বড় ধাপ। কমিশন চাইছে, কোনওভাবেই যেন ভুয়ো নাম বা মৃত ভোটারদের এন্ট্রি তালিকায় না থাকে। পাশাপাশি নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছে তারা।
সব মিলিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে বাংলার ভোট প্রস্তুতির নতুন অধ্যায়। একদিকে কমিশনের কড়া নজর, অন্যদিকে প্রশাসনের তৎপরতা এসবের মাঝেই রাজ্যের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে ভোটের আগে গরম হাওয়া।
