
আমেরিকায় আবারও অভিবাসী শ্রমিকদের উপর কঠোরতা আনল ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন স্বরাষ্ট্র সুরক্ষা দফতরের (DHS) নতুন নীতিতে বদল আসছে কর্ম অনুমতির নিয়মে। এর ফলে হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক তাঁদের চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ থেকে আর কোনও বিদেশি নাগরিক তাঁদের কর্ম অনুমতি নবীকরণের জন্য আবেদন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তি সময় পাবেন না। এতদিন পর্যন্ত, যাঁদের Employment Authorisation Document (EAD) বা কর্ম অনুমতি নবীকরণের প্রক্রিয়া চলছিল, তাঁরা ৫৪০ দিন পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু নতুন নীতি কার্যকর হওয়ার পর, অনুমতির মেয়াদ শেষ হলেই তাঁদের কাজ বন্ধ করতে হবে, যতক্ষণ না নবীকরণের অনুমোদন মেলে।
এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন ভারতীয় পেশাজীবীরা, যাঁরা মার্কিন প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও গবেষণা ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে H-1B ভিসাধারী, তাঁদের নির্ভরশীল H-4 ভিসায় থাকা স্ত্রী বা স্বামী, এবং STEM বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা এই নীতির প্রভাবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যেই গ্রীন কার্ডের দীর্ঘ প্রতীক্ষায় রয়েছেন কেউ কেউ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (USCIS) জানিয়েছে, আবেদনকারীদের উচিত মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ১৮০ দিন আগে নতুন করে আবেদন করা। কিন্তু বাস্তবে অনুমোদনের সময়সীমা তিন থেকে বারো মাস পর্যন্ত লেগে যায়, ফলে অনেকেরই মাঝপথে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তকে “জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পদক্ষেপ” বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি আমেরিকার দক্ষ বিদেশি কর্মীদের প্রতি অন্যায্য পদক্ষেপ, যা বহু পরিবারকে আর্থিক ও মানসিক সংকটে ফেলতে পারে। চাকরি হারানোর ফলে তাঁদের ভিসা স্ট্যাটাসও বিপন্ন হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে কাজ হারালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নতুন নিয়োগ না পেলে দেশ ছাড়তে হয়।
গত এক বছরে ট্রাম্প প্রশাসন একাধিক কঠোর অভিবাসননীতি গ্রহণ করেছে যেমন H-1B ভিসার ফি ১ লক্ষ ডলার পর্যন্ত বাড়ানো এবং কিছু রাজ্যে বিদেশিদের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা। এই নতুন সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রায় লক্ষাধিক ভারতীয় প্রযুক্তি ও গবেষণা কর্মী চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
অন্যদিকে, অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, এই নিয়ম মার্কিন শিল্পক্ষেত্রকেও ক্ষতি করবে, কারণ বহু কোম্পানি দক্ষ কর্মীর অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। সব মিলিয়ে, নতুন কর্ম অনুমতি নীতি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ভারতীয় সম্প্রদায়ের কাছে এক নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
