
মোতেরা থেকে মুম্বই। ৫৪৫ কিলোমিটারের দূরত্ব অতিক্রম করতে লেগে গেল প্রায় দুটি বছর। জেমাইমা-হরমনপ্রীতদের অমানুষিক জেদের সামনে পরাভূত অ্যালিসা হিলির অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়া। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর ঠিক যেরকম জেদ ভর করেছিল প্যাট কামিন্স আর ১০ জন সতীর্থের মধ্যে। আর তার জেরে ছারখার হয়ে গিয়েছিল ১৫০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন। বৃহস্পতিবার রোহিত তথা গোটা দেশের হয়ে সেই বদলা মিটিয়ে হরমনপ্রীত কৌর এন্ড কোং অজিদের সেমিফাইনাল থেকেই কেবল ছিটকে দিলেন না, সেই সঙ্গে ৩৩৯ রান তাড়া করে লিখে ফেললেন ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।
পুরুষ দল হোক, কিংবা মেয়েরা। ২২ গজে অস্ট্রেলিয়া মানেই বিপক্ষের একধাপ পিছিয়ে শুরু করা। বরং নারী বাহিনী যেন এককাঠি বাড়া। গতবারের বিশ্বজয়ীরা শেষবার বিশ্বকাপের মঞ্চে হেরেছিল সেই ৮ বছর আগে ২০১৭ সালের সেমিফাইনালে। সেদিনও বিজয়ী দলের নাম ছিল ভারত। তবে এ দিন ৩ নম্বরে নামা জেমাইমা রদ্রিগেজের ১৩৪ বলে অপরাজিত ১২৭ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংসটি যে দাগা দিল অজি বোলারদের তা হয়ত আগামী বিশ্বকাপেও তাঁদের তাড়া করবে। উল্টোদিকে এদিনের রূপকথাসম জয়ের পর হরমনপ্রীতও কি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন না, রবিবার মহার্ঘ্য ট্রফিটা তাঁর হাতেই উঠতে চলেছে?
দু’বছর আগের ফাইনালে মোতেরায় উপস্থিত লক্ষাধিক জনতাকে চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এ দিন নবি মুম্বইয়ের ডি ওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামেও টিম ইন্ডিয়ার হয়ে গলা ফাটাতে নেহাত কম লোক উপস্থিত হননি। এঁদের কিন্তু চুপ করাতে পারলেন না কামিন্সের বিশ্বজয়ী দলের অন্যতম সদস্য মিচেল স্টার্কের ঘরণি অ্যালিসা। ঝকঝকে শতরানে তাঁকে আর তাঁর দলকে রুখে দিয়ে দর্শকদের কলরব দ্বিগুণ করার দায়িত্ব কার্যত যেন একাই নিয়েছিলেন জেমাইমা।
হরমনপ্রীত কৌরও ৮৮ বলে খেলেন ৮৯ রানের অধিনায়িকাসুলভ ইনিংস। তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে তৃতীয় উইকেটে ১৬৭ রান যোগ করেন জেমাইমা। এরপর পরের দিকে যথাক্রমে ১৭ বলে ২৪ এবং ১৬ বলে ২৬ করে যান দীপ্তি শর্মা এবং বাংলার মেয়ে রিচা। তবু পর্বতসম লক্ষ্য তাড়া করায় ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন জেমাইমা-ই। চোটের জেরে ছিটকে যাওয়া প্রতীকা রাওয়ালের জায়গায় আসা শেফালী ভার্মা (১০) ফিরে যান শুরুতেই। ব্যর্থ আরেক ওপেনার স্মৃতি মন্ধানাও (২৪)। এই পরিস্থিতিতে অন্ততঃ একজনের শেষপর্যন্ত মাথা ঠাণ্ডা রেখে টিকে থাকার দায়িত্বটা নিতে হত। নিজের কাঁধে জেমাইমা তুলে নেন সে দায়িত্ব।
২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটার অবশ্য এ দিন বারদুয়েক জীবনও পেয়েছেন। অজিদের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে যা হতে পারে, খেলা না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবে না কেউ। শেষ পর্যন্ত পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো এই দুই অপ্রত্যাশিত সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বাজিমাত করলেন জেমাইমা। এ বার আর কেবল একটি ধাপ। সামনে শুধুই দক্ষিণ আফ্রিকা। এ বার ভালোয় ভালোয় বিশ্বকাপটা এসে যাক, আর কী চাই সমর্থকদের?
