
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT-BD) আবারো সমালোচনার মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা এটিকে “ক্যাঙ্গারু কোর্ট” ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পরিচালিত আদালত হিসেবে দেখছেন। সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের বর্তমান বিচার ও প্রশাসনিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রশাসন সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করছে এবং বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থের উপযোগী করে তুলছে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রপতির একটি আদেশের মাধ্যমে ICT আইনকে অতীতমুখীভাবে সম্প্রসারণ করা হয়। এতে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সংঘটিত অপরাধগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা সংবিধানের ৩৫(১) ও ৯৩ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন। এছাড়া অভিযুক্তদের আইনজীবী বেছে নেওয়ার অধিকার হরণ, পক্ষপাতদুষ্ট প্রসিকিউটর নিয়োগ এবং একপাক্ষিক শুনানি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় চার লাখ মানুষ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সাংবাদিকতা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কারণে ন্যায্য বিচার ছাড়া আটক হয়েছেন। কারাগারগুলো ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি বন্দিতে পূর্ণ এবং অনেক ক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড Rome Statute অনুযায়ী মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি স্বাধীন ও ন্যায্য বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজন। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই পরিস্থিতিতে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে, যা শুধু দেশটির জন্য নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
