
স্নিগ্ধা চৌধুরী
অবশেষে প্রমাণ মিলল, মেয়েরাই পারে। পারে ইতিহাস গড়তে, পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। নবি মুম্বইয়ের ডঃ ডি.ওয়াই. পাটিল স্পোর্টস অ্যাকাডেমির মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতল। এই জয় কেবল একটি ট্রফির নয়, এটি এক যুগের লড়াই, এক জাতির গর্ব, আর প্রতিটি নারীর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
বহু বছর ধরে সংগ্রামের গল্পে লেখা হয়েছে এই বিজয়। ২০১৭ সালের পরাজয়, ২০২০-এর হারের দহন, ২০২৩-এর চোখের জল সব কষ্ট একদিন এক সোনালি মুহূর্তে পরিণত হল। আজ সেই ইতিহাসে আগুনের অক্ষরে লেখা রয়েছে নারীর নাম। দীপ্তি শর্মা, শেফালি ভার্মা, স্মৃতি মন্ধানারা মিলে তৈরি করেছেন এক নতুন সকাল, যেখানে নারীরা শুধু খেলেন না, জয় করেন।
দীপ্তির অলরাউন্ড দক্ষতা দলের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছিল। তাঁর বল হাতে নিখুঁত ছন্দ আর ব্যাট হাতে নির্ভীক আঘাতে কেঁপে উঠেছিল প্রতিপক্ষের মনোবল। শেফালির ব্যাট থেকে ঝরে পড়ছিল আগুন, প্রতিটি শটে ছিল আত্মবিশ্বাসের ঝলক। স্মৃতি মন্ধানার শান্ত নেতৃত্ব গোটা দলকে এনে দিয়েছিল সেই স্থিরতা, যা বড় ম্যাচে প্রয়োজন হয় না, বিশ্বাস হয়ে ওঠে।
ভারতের ইনিংস ছিল এক জোয়ার। প্রতিটি রান একেকটি স্বপ্ন, প্রতিটি বাউন্ডারি একেকটি ঘোষণার মতো। মাঠের প্রতিটি কোণ জুড়ে ছিল ঘামের গন্ধ, সাহসের ছোঁয়া, আর চোখের দৃষ্টিতে ছিল অদম্য প্রতিজ্ঞা। দক্ষিণ আফ্রিকা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ভারতীয় মেয়েদের সেই লড়াই ছিল আগুনের মতো যা নিভে না, থামে না, কেবল সামনে এগিয়ে চলে।
নবি মুম্বইয়ের রাত তখন এক উৎসবে রূপ নিয়েছিল। গ্যালারিতে ঢেউ তুলেছিল আবেগ, রঙিন পতাকায় ভেসে উঠেছিল একটাই বার্তা নারীর জয় মানে জাতির জয়। সেই মুহূর্তে ভারত যেন নতুন করে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখেছিল, যেখানে মেয়েরা নেতৃত্ব দেয়, সামনে হাঁটে, আর ইতিহাসকে নতুন করে লিখে ফেলে।
এই জয় শুধু ক্রিকেট মাঠের সীমায় আটকে নেই। এটি প্রতিটি ছোট শহরের মেয়ে, প্রতিটি মাটির ঘরের কিশোরীর স্বপ্নের আলো। এটি দেখিয়ে দিল, নারীর শক্তি কোনো সহানুভূতির গল্প নয়, এটি লড়াই, এটি আগুন, এটি জন্মগত সাহস।
ভারতীয় মহিলা দলের এই জয় এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। এটি প্রমাণ করেছে, নারীরা শুধু খেলার অংশ নয়, তারা খেলার সংজ্ঞা বদলে দিতে পারে। আজকের দিন তাই এক নবযুগের প্রতীক যেখানে মেয়েরা নেতৃত্ব দেয়, জয় করে, আর বিশ্বকে শেখায় যে মেয়েরাই পারে।
