
পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গিনি বিসাউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জেরে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে রাতারাতি সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী হল। বুধবার গভীর রাতে রাজধানী বিসাউয়ে প্রেসিডেন্ট ভবন, নির্বাচন কমিশনের সদর দফতর ও সচিবালয়ের দিক থেকে টানা গুলির শব্দ শোনা যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেনা সদস্যদের একটি বিশেষ জোট নিজেদের দেশের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে সরকারি টিভি চ্যানেলে এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে যে দেশ এখন সামরিক নিয়ন্ত্রণে এবং পূর্ববর্তী সরকারের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালোকে সেনারা গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল পিএআইজিসির নেতা ডোমিঙ্গোস সিমোয়েস পেরেইরাকেও আটক করা হয়েছে। সেনা জানায়, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নাগরিক জীবনকে অস্থিতিশীল করে তুলছিল এবং নির্বাচনের পরে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছিল। তাই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
গত ২৩ নভেম্বর গিনি বিসাউয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফল ঘোষণার আগেই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী দুজনেই নিজেদের জয় দাবি করেন। নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে বিজয়ী ঘোষণা না করায় পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হয়ে ওঠে। প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় থমকে দাঁড়ায় এবং রাজধানীতে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই সেনাবাহিনী সরাসরি হস্তক্ষেপ করে।
আটলান্টিকের উপকূলে অবস্থিত গিনি বিসাউ দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জর্জরিত। সামরিক অভ্যুত্থান, দুর্নীতি ও বিদেশি শক্তির প্রভাব সব মিলিয়ে দেশটি বহু বছর ধরেই অনিশ্চয়তার মুখে। সামরিক অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে আন্তর্জাতিক মহলেও এই দেশকে নজরে রাখা হয়। গত কয়েক দশকে দেশে চিনের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও পরিস্থিতি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।
নতুন সামরিক প্রশাসন এখন দেশে স্থিতি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও নাগরিকরা আশঙ্কা করছেন দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তার। আন্তর্জাতিক মহলও পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে।
