
ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে ফের ভাঁজ পড়েছে। নীরব আলোচনার আড়ালে যেন জমতে থাকা বজ্রপাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও জেএমএম প্রধান হেমন্ত সোরেনের দিল্লিতে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে। রাঁচিতে এখনও সব শান্ত হলেও রাজধানীর গলিপথে রাজনীতির বাতাস অনেকটা বদলে গেছে।
৮১ সদস্যবিশিষ্ট বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সীমা ৪১। বর্তমানে জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি-বামফ্রন্ট মিলিয়ে শাসক জোটের দখলে ৫৬ আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার এমন সুরক্ষিত দূর্গ থাকার পরও কেন হেমন্ত সোরেনকে দিল্লির পথে যেতে হলো এই প্রশ্নই এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
সাম্প্রতিক বিহার নির্বাচনে জেএমএম-এর হতাশাজনক ফলের পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, কংগ্রেস-আরজেডির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পুনর্বিবেচনা শুরু করেছে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও দুই বড় কারণ ইডি তদন্তে হেমন্তের উদ্বেগ এবং কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার রাজনৈতিক প্রয়োজন। নতুন বিল অনুসারে গ্রেফতারি হলে মুখ্যমন্ত্রীকে ৩১ দিনের মধ্যে পদত্যাগ করতে হতে পারে। এই চাপ দলের ভেতরে অনিশ্চয়তার বাতাস বাড়িয়েছে।
অন্যদিকে বিজেপি এখনই সরকারের অংশ না-হলেও বাইরে থেকে সমর্থনে আগ্রহী বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। বর্তমানে বিজেপির ২১টি আসন, সঙ্গে যদি লজেপি, জেডিইউ, এজেএসইউ-এর সমর্থন যোগ হয়, তা হলে সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪–২৫। তার সঙ্গে যদি কংগ্রেসের একাংশের সমর্থন মিলিয়ে যায়, তবে ক্ষমতার অঙ্ক নতুন একটি রঙ পাবে। এমনকি কংগ্রেসের কয়েকজন বিধায়ক নতুন সমীকরণে সায় দিতে প্রস্তুত এ খবরও ভেসে এসেছে বিভিন্ন সূত্রে।
এদিকে শিবু সোরেনকে ভারত রত্ন দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তা জেএমএমের মনস্তত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পরিবারের প্রতি কেন্দ্রের ‘সম্মান’ রাজ্যে ভবিষ্যৎ রাজনীতি আরও মসৃণ করতে পারে এমনও মনে করেন অনেকেই।
সব মিলিয়ে স্পষ্ট, ঝাড়খণ্ডে রাজনৈতিক চিত্রপটে নতুন রং লাগতে চলেছে। এই পরিবর্তন রাতারাতি ঘটবে না, কিন্তু নানা স্তরে যে জোটগত ভূমিকম্পের ইঙ্গিত মিলছে, তা আর অস্বীকার করার উপায় নেই। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে দিল্লির এই নীরব দৌড় শেষ পর্যন্ত সরকার বদলের পথ খুলে দেয়, নাকি জেএমএম কৌশলগত চাপ তৈরি করার জন্যই বিজেপির সঙ্গে সাময়িক নৈকট্য বজায় রাখছে।
ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। অঙ্কের ঘর আজও স্থির, কিন্তু সমীকরণ বদলাতে শুরু করেছে এ কথাই বলছে গত কয়েক দিনের নেপথ্য তৎপরতা।
