চৈত্র নবরাত্রি ও রামনবমী উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশে মাংস বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সময়ে রাজ্যের সমস্ত ধর্মীয় স্থানগুলির ৫০০ মিটারের মধ্যে মাংস বিক্রি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি, ৬ এপ্রিল রামনবমীর দিনে গোটা রাজ্যে পশু হত্যাও নিষিদ্ধ থাকবে।
সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, স্থানীয় প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে যে কোনও মন্দির, ধর্মীয় স্থান বা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব পালনের এলাকাগুলির আশেপাশে মাংস বিক্রি না হয়। এ ছাড়াও, নগর উন্নয়ন বিভাগের নির্দেশে রাজ্যের সমস্ত অবৈধ কসাইখানা অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রতিটি জেলার জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার এবং পৌরসভা কর্মকর্তাদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। খাদ্য সুরক্ষা আইন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনের আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথাও স্পষ্ট করা হয়েছে।
নবরাত্রির পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে নেওয়া এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। প্রশাসনের মতে, এই সময়ে সাফাই ও পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় নোংরা বা দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ করার দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে এই নিষেধাজ্ঞা ঘিরে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে, কারণ নবরাত্রির সময়েই ইদ উৎসবও রয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইদের সময় তাঁদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের জোগানে সমস্যা হতে পারে।
এছাড়াও, মিরাটে প্রশাসন রাস্তায় নমাজ পড়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অনুমতি ছাড়া রাস্তায় ধর্মীয় সমাবেশ বা নমাজের আয়োজন করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করলে কড়া শাস্তির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য ভালো উদ্যোগ, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত, যা সব সম্প্রদায়ের কথা বিবেচনা না করেই নেওয়া হয়েছে।
যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র উৎসবের পবিত্রতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে, তবে একে ঘিরে বিতর্কের আঁচ বাড়ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রশ্নে এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখা হবে, তা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
আগামী দিনে এই নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর হয় এবং এর প্রভাব কীভাবে পড়ে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
