২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লু বুশ দুদেশের অসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতার কথা ভেবে এক চুক্তির উদ্যোগ নেন। পরে ২০০৮ সালে ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নানা কারণে নানা পদক্ষেপে ঐতিহাসিক সেই চুক্তি ফের এসে উপস্থিত এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের সমাপনে। ভারত-মার্কিন বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তির অধীনে এখন পর্যন্ত মার্কিন কোম্পানিগুলো শুধু রিঅ্যাক্টর ও যন্ত্রপাতি রপ্তানি করতে পারত, কিন্তু ভারতে ডিজাইন বা উৎপাদনের অনুমতি ছিল না। যদিও দিল্লি সবসময় জোর দিয়ে এসেছে যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রর ডিজাইন, উৎপাদন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর—সবই ভারতে হতে হবে।তারই সুফল মিলল এবার। এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি একটি মার্কিন কোম্পানিকে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ডিজাইন ও নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির আইনি অনুমোদন, দায়বদ্ধতা শর্ত, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও নকশা চূড়ান্ত করতে লেগে গেল প্রায় ২০ বছর।
ভারতের কূটনীতির বড় জয়
এতদিন মার্কিন কোম্পানিগুলো শুধু রিঅ্যাক্টর রপ্তানি করতে পারত, কিন্তু ভারতে ডিজাইন বা উৎপাদনে অংশ নিতে পারত না। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির শর্ত মেনে নিয়েছে।সম্প্রতি মার্কিন সফরে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কোম্পানিগুলো যৌথভাবে স্মল মডুলার রিঅ্যাক্টর এবং এর যন্ত্রাংশ উৎপাদন করবে। ২০২৫ সালের ২৬ মার্চ এই অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এই যৌথভাবে নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্র সরকারের লিখিত সম্মতি ছাড়া ভারতের অন্য কোনো সংস্থা বা তৃতীয় দেশে স্থানান্তর করা যাবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তি আইন অনুযায়ী, হোলটেক ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি মার্কিন কোম্পানিকে তিনটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে এস এম আর প্রযুক্তি হস্তান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।হলটেক ইন্টারন্যাশনালের মালিক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিল্পপতি ক্রিস পি সিং। এই সংস্থাকে ভারতের তিনটি সংস্থায় (হলটেক এশিয়া, টাটা কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এবং লারসেন অ্যান্ড টুব্রো লিমিটেড) অপ্রশিক্ষিত ছোট মডুলার রিঅ্যাক্টর (এসএমআর) প্রযুক্তি হস্তান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, ভারতের জয়
এই চুক্তি ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন সাধারণত “মেড ইন ইউএসএ” নীতিকে প্রাধান্য দেয়। কিন্তু সেই কট্টর ট্রাম্প প্রশাসনই ভারতে পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর উৎপাদনের অনুমতি দেওয়ায় তাকে ভারতের জয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এছাড়া এই প্রথম পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর ডিজাইন ও উৎপাদনে বিশেষজ্ঞতা অর্জনে নাম লেখাচ্ছে ভারতের বেসরকারি ক্ষেত্র। বর্তমানে ভারত ২২০MWe প্রেশারাইজড হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর তৈরিতে পারদর্শী হলেও তারা এখন প্রেশারাইজড ওয়াটার রিঅ্যাক্টর প্রযুক্তিও পাবে যা বিশ্বের বেশিরভাগ পারমাণবিক কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়। এই মুহূর্তে চিন সস্তা দরে এস এম আর রপ্তানি করে পৃথিবীর বুকে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।এবার বেজিংয়ের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেই দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোর জন্য সাশ্রয়ী এস এম আর আনতে প্রতিযোগিতায় নামছে দিল্লি।