অভিজিৎ বসু
একটা সময় ছিল যখন সারা দেশ থেকে মানুষ এই বাংলায় আসতেন কাজের জন্য। সেটা ছিল একটা গৌরবের দিন। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত একটা দিন ছিল সেই সময়। কিন্তু সেই সব দিন তো আজ ইতিহাস এর পাতায় স্থান নিয়েছে। সেই সময় ছিল মাড়োয়ারি পাড়া, গুজরাতি পাড়া, পাঞ্জাবি এলাকা এই সব ছিল। গঙ্গার দু পাড় ধরে ছিল চটকল শ্রমিকদের বসতি। সকাল হলেই চিমনির ধোঁয়া দেখা যেতো বাংলার নানা জায়গায় গঙ্গার দু পাশ ধরে। এটাই ছিল আমাদের এই বাংলার চেনা প্রতিচ্ছবি।
বাংলায় এখন কাজের বেশ ভাটার টান। কর্মসংস্থানে আর কর্মসংষ্কৃতিতে এখন ভাটার টান। হৈ চৈ হুল্লোড় করে প্রতি বছর শিল্প বাণিজ্য সম্মেলন হয় বটে কিন্তু শিল্পের দেখা মেলে কই। বড়ো মাপের শিল্প এই রাজ্যে আসে না আর কিছুতেই। যে বাংলা একদিন নানা শিল্প নিয়ে গর্ব অনুভব করতো সেখানেও কেমন ভাটার টান পড়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। সেই কবে একবার টাটাকে নিজের রাজ্যে আনতে গিয়ে বামেদের টাটা করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। শাসক দল বর্তমানে ভোটের বাজারে কিছুটা ফায়দা তোলে তাদের বাহুবলে আর কিছুটা দান আর খয়রাতির জোরে প্রভাব খাটিয়ে এটাই এখন একমাত্র সিস্টেম। কিন্তু পরোক্ষে তার প্রভাব পড়ে রাজকোষ ফাঁকা হয়ে যায় বেমালুম। কে আর সেদিকে নজর দেয়। কথায় আছে লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। সে তো বটেই গৌরী সেন এর আমলে দান খয়রাতির কি অসুবিধা আর।
আর গ্রামে গ্রামে লেঠেল বাহিনীর অত্যাচারে যখন সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা গ্রামগুলো একদম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে শাহজাহান, আরাবুলদের দাপটে তখন বাকিরা সব গ্রাম ছেড়ে আশ্রয় নেয় পেটের টানে আর পিঠ বাঁচাতে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে দূরে অনেক দূরে। পরিযায়ী শ্রমিক এখন বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ালে অনেক পাওয়া যাবে। যেখানে ঘর আছে, দুয়ার আছে, ভিটে আছে কিন্তু মানুষজন নেই। কারণ সবাই যে গ্রাম বাংলা ছেড়ে পরিযায়ী পাখি হয়ে উড়ে গেছে তারা দিল্লী, হায়দরাবাদ, মুম্বাই, পুনে, চেন্নাই নানা জায়গায়। আজ বাংলার গ্রাম ছেড়ে চলে আসা মানুষের ভীড় বাড়ছে ক্রমেই এই সব এলাকায়। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিক এর কোনোও হিসেব নেই এই রাজ্যের সরকার এর কাছে। সেই লকডাউন এর সময় কি ভয়াবহ পরিস্থিতি ঘটেছিল তার ছবি এখনও মনে আছে আমাদের সকলের। আর তারপর অতিমারী কেটে গেলেও কাজ না পেয়ে আবার তাঁরা ফিরে গেছেন সেই পুরোনো কাজেই।
দিন দিন সরকারী চাকরিতে নিয়োগ কমছে। চুক্তি ভিত্তিক লোক নিয়োগ করেই চলছে সরকার। এটাই এখন একমাত্র কাজের সুযোগ করে দেওয়া। কর্ম সংস্থান নিয়ে তেমন কোনোও দিশা দেখাতে সক্ষম হয়নি এই সরকার। যদিও ৩৪ বছরের বাম সরকারও তেমন কোনো দিশা দেখাতে পারে নি তারাও। আর এই সবের মাঝেই কর্মরত শিক্ষকদের হঠাৎ করেই কর্মহীন হয়ে যাওয়া। কর্ম কোথায় যে ভিন রাজ্যের শ্রমিক এই রাজ্যে আসবেন কাজের সন্ধান করতে। এই রাজ্যে এখন দুটি কাজ করতে পারা যাবে হয় শাসক দলের মদতপুষ্ট হয়ে সিন্ডিকেট এ যোগ দেওয়া। আর না হলে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে চলে যাওয়া। এ ছাড়া যে আর কোনোও উপায় নেই এই সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলার মানুষের। আপনি কী করবেন সেটা না হয় আপনি নিজেই ঠিক করে নিন।