ডিজিটাল ভারতের পথকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সম্প্রতি একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর আধার অ্যাপ চালু করেছেন, যার মাধ্যমে এখন মুখ স্ক্যান করলেই মিলবে ব্যক্তিগত পরিচয় সংক্রান্ত সব তথ্য। আধার কার্ডের ফটোকপি বহন করা, বা কার্ড হারানোর ঝুঁকি—এই সমস্ত সমস্যারই অবসান ঘটাবে এই নতুন অ্যাপ।
নতুন এই আধার অ্যাপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি ব্যবহারকারীর মুখ স্ক্যান করেই তার আধার সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বের করে আনতে সক্ষম। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে হোটেলে চেক-ইন হোক বা বিমানবন্দরে নিরাপত্তা চেক, কোথাও আর আপনাকে আধার কার্ডের হার্ড কপি দেখাতে হবে না। শুধুমাত্র মোবাইল অ্যাপে মুখ স্ক্যান করলেই প্রমাণ হবে আপনার পরিচয়।
সরকারের দাবি, এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা যেমন বজায় থাকবে, তেমনি পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়াও হবে অধিকতর নিরাপদ ও দ্রুত। অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, অনেক জায়গায় আধার কার্ডের কপি নেওয়ার ফলে ব্যবহারকারীর তথ্য অপব্যবহারের আশঙ্কা তৈরি হতো। এবার সেই আশঙ্কা অনেকটাই দূর হবে। কারণ, এই অ্যাপ ব্যবহার করে শুধু নির্দিষ্ট তথ্যটুকু শেয়ার করা যাবে, সম্পূর্ণ আধার ডেটা নয়।
তথ্য প্রযুক্তির এই নতুন দিগন্তে পা দিয়ে, আধার ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক বেশি নাগরিকবান্ধব হয়ে উঠছে। যেমন, কেউ যদি হোটেলে উঠতে চান, তাহলে শুধুমাত্র মুখ স্ক্যান করালেই হোটেল কর্তৃপক্ষ জানবেন, ওই ব্যক্তি সত্যিই তাঁর পরিচয় অনুযায়ীই রেজিস্টার করছেন। পাশাপাশি, বিমানের বোর্ডিং, রেল টিকিট বুকিং, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবাতেও এই অ্যাপ ব্যবহার করে মুখ স্ক্যানের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করা যাবে।
এই অ্যাপটি শুধুমাত্র আধার নম্বরের তথ্য প্রদর্শন করে না, বরং একটি QR কোড স্ক্যানারও যুক্ত রয়েছে, যার মাধ্যমে আরও সহজে ও নিরাপদে তথ্য যাচাই করা যায়। প্রাথমিকভাবে এই অ্যাপটি কিছু নির্বাচিত শহরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। পরবর্তীতে গোটা দেশেই এটি ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের।
অনেকেই মনে করছেন, এই অ্যাপ দেশের ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থা (Digital Identity Infrastructure)-কে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। আধার কার্ডের যেমন এখন ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে—বিকাশ প্রকল্প, রেশন বিতরণ, পেনশন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, সিম কার্ড কেনা ইত্যাদি—এই অ্যাপ সেই সমস্ত ক্ষেত্রেই আরও দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত পরিষেবা দেবে।
তবে এই অ্যাপ ব্যবহারের জন্য একটি স্মার্টফোন থাকা আবশ্যক এবং ব্যবহারকারীর আধার কার্ডের সঙ্গে মুখের মিল থাকতে হবে। এর ফলে কোনও ভুয়ো দাবি বা পরিচয়ের অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
এই আধার অ্যাপের কার্যকারিতা ও ভবিষ্যৎ প্রসার আরও অনেকদূর নিয়ে যেতে পারে ডিজিটাল ভারতে প্রযুক্তির ব্যবহার। নতুন প্রজন্মের কাছে যেমন এই অ্যাপ হবে সময় বাঁচানোর হাতিয়ার, তেমনি প্রবীণ নাগরিকরাও ধাপে ধাপে এর ব্যবহার শিখে সহজেই আধার সংক্রান্ত কার্যকলাপ সম্পন্ন করতে পারবেন।
এক কথায়, আধার কার্ড ব্যবহারে এক বিপ্লব আনতে চলেছে এই মুখ-ভিত্তিক আধার অ্যাপ। গোপনীয়তা রক্ষা, পরিচয়ের নির্ভরযোগ্যতা এবং প্রযুক্তির আধুনিক ব্যবহারের সংমিশ্রণ—এই অ্যাপ ডিজিটাল ভারতের পথচলায় এক ঐতিহাসিক সংযোজন।