আজকাল স্কিনি ফিট পোশাক যেন এক নতুন যুগের ফ্যাশন বিবৃতি। বিশেষ করে শরীরের রেখার সৌন্দর্য তুলে ধরতে কিংবা আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন এমন পোশাক যা ত্বকের সঙ্গে একেবারে মিশে থাকে। মেদহীন চেহারা বা টোনড ফিগার দেখানোর বাসনায় যাঁরা নিয়মিত টাইট পোশাক পরেন, তাঁরা অনেক সময় নিজেকে আরও বেশি লাস্যময়ী ও আকর্ষণীয় মনে করেন।
কিন্তু এই ফ্যাশনের পিছনে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি, যা হয়তো বাহ্যিক দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না, কিন্তু শরীরের ভিতরে ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দেয় নানা জটিলতা। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত টাইট পোশাক পরলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে চাপ সৃষ্টি হয়, যা একাধিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। নিচে তুলে ধরা হলো টাইট পোশাকের ১০টি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি—
১. ত্বকের জ্বালা ও অস্বস্তি:
টাইট পোশাক ত্বকের উপর অতিরিক্ত ঘর্ষণ তৈরি করে। এর ফলে লালচে ভাব, চুলকানি, র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়।
২. স্নায়ুতে চাপ:
অত্যন্ত আঁটসাঁট পোশাক স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে পায়ে বা হাতে অসাড়তা, ঝিনঝিনে ভাব কিংবা মাঝেমধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। নিয়মিত এই ধরনের চাপ দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ুব্যাধির জন্ম দিতে পারে।
৩. শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা:
পেট বা বুকের অংশে খুব বেশি টাইট কাপড় পরলে ডায়াফ্রামের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়। এতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অক্সিজেন গ্রহণ কমে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. রক্ত সঞ্চালনে বিঘ্ন:
বিশেষ করে পায়ে বা কোমরে টাইট পোশাক রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে পা ভারি লাগে, ফোলা ভাব হয় এবং গুরুতর ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা দেখা দেয়।
৫. হজমজনিত সমস্যা:
পেটে চাপ সৃষ্টি করা পোশাক পরলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS) ও GERD-এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৬. সংক্রমণের আশঙ্কা:
মহিলাদের ক্ষেত্রে টাইট পোশাক অন্তর্বাস বা নিম্নাঙ্গে আর্দ্রতা ধরে রাখে, যা ছত্রাক সংক্রমণের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। এর ফলে যোনি সংক্রমণ ও ত্বক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
৭. দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ু ব্যথা:
যারা প্রতিদিন দীর্ঘ সময় টাইট পোশাক পরেন, তাঁদের ক্ষেত্রে স্নায়ুতে স্থায়ী চাপ তৈরি হয়। এর ফলে ব্যথা বা অসাড়তা ক্রমে স্থায়ী হতে পারে, যা সহজে আর সারেও না।
৮. ভেরিকোজ ভেইন ও রক্ত জমাট বাঁধা:
দীর্ঘ সময় আঁটসাঁট পোশাক পরলে রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। এতে ভেরিকোজ ভেইনের মতো সমস্যা বা ঘন ঘন পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা দেখা যায়।
৯. অস্থি ও পেশির ওপর অতিরিক্ত চাপ:
টাইট বেল্ট, জিনস বা কোমরঘেঁষা পোশাক দীর্ঘ সময় পরলে পিঠে, কোমরে এবং নীচের অংশে চাপ পড়ে। এতে অস্থি ও পেশির জটিল ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।
১০. ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী রোগ:
নিয়মিত ঘর্ষণ ও ঘাম জমে থাকার ফলে ত্বকে একজিমা, ডার্মাটাইটিস বা অন্যান্য চর্মরোগ দেখা দিতে পারে, যা পরবর্তীকালে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন তৈরি করে।
ফ্যাশন অবশ্যই সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। তবে তা যদি স্বাস্থ্যকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়, তবে সেই ফ্যাশনের মূল্য দিতে হতে পারে চরমভাবে। টাইট পোশাক মাঝে মধ্যে পরা যেতেই পারে, কিন্তু প্রতিদিন, দীর্ঘ সময় তা পরা শরীরের পক্ষে মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। আরামদায়ক, শরীরের শ্বাস নিতে সক্ষম এবং স্বাভাবিক চলাফেরায় সহায়ক পোশাকই হওয়া উচিত বুদ্ধিমানের পছন্দ।
ফ্যাশন হোক বা স্বাস্থ্যসচেতন—এটাই হোক ট্রেন্ড!

