বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আবহে আবারও বড়সড় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এবার তাঁর বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানানো হয়েছে। অভিযোগ, তিনি দেশের বাইরে থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (NCB) এই আবেদন জানিয়েছে ইন্টারপোলের দপ্তরে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন উঠে এসেছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যার ভিত্তিতে হাসিনার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ও গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে আওয়ামি লীগের আরও ১১ জন শীর্ষ নেতার নামও রয়েছে অভিযোগপত্রে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, শেখ হাসিনা শুধু রাজনৈতিক স্থিতাবস্থাকে বিঘ্নিত করছেন না, বরং দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে কাজ করছেন। সরকার পরিচালনায় যিনি এখন সর্বোচ্চ আসনে, সেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূস নিজেও এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে প্রকাশ্যে সতর্কতা জারি করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে ছাত্র-যুব আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়। আওয়ামি লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা। আন্দোলনের চাপেই পদত্যাগ করেন হাসিনা এবং ভারতে আশ্রয় নেন।
এরপর থেকেই ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের প্রথম কাজ ছিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা আনা এবং মানবাধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা। কিন্তু তাতে বাধা দিচ্ছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী—এমনই অভিযোগ নতুন প্রশাসনের।
গত বছর নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অফিসও বাংলাদেশ পুলিশকে পরামর্শ দিয়েছিল, ইন্টারপোলের সহায়তা নিয়ে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার বিষয়ে সক্রিয় হোক তারা। সেই প্রক্রিয়ারই নবতম পর্ব এই রেড কর্নার নোটিস জারির আবেদন।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারপোল যদি এই আবেদন গ্রহণ করে, তাহলে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হতে পারে ভারতের ওপর। কারণ, রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রশ্নে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অবস্থান জানায়নি।
অন্যদিকে, আওয়ামি লীগপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই পদক্ষেপকে “রাজনৈতিক প্রতিশোধের প্রতিচ্ছবি” বলে কটাক্ষ করেছে। তাঁদের মতে, এটি একটি স্পষ্টভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, যার লক্ষ্য বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করা।
তবে ইউনূস সরকার এ বিষয়ে অনড়। তাঁরা মনে করেন, দেশে ফিরে আসার আগ্রহ না থাকলেও শেখ হাসিনা বিদেশে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন। তাঁদের ভাষায়, “গণতন্ত্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে আমাদের দ্বিধা নেই।”
এই আবেদনের পরবর্তী পরিণতি এখন ইন্টারপোলের হাতে। তারা যদি রেড কর্নার নোটিস ইস্যু করে, তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়বে, এবং ভারতের ওপরও পড়বে জটিল কূটনৈতিক চাপ।
