আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত রাজ্য,এসএসসি ও সিবিআই
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিতে রাজ্যের উপর চাপ বাড়ালো। কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৬ এস এস সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শিক্ষক শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীদের পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল যে বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ সেই বিচারপতির দেবাংশু বসাকের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ আজ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিতে রাজ্য সরকারকে ৪৮ ঘন্টা সময়সীমা বেঁধে দিল। একই সঙ্গে এই গোটা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তের সারসংক্ষেপ চেয়ে হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইকে যে নির্দেশ দিয়েছিল সেই নির্দেশ কেন অমান্য করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে সিবিআইকেও ৪৮ ঘন্টা সময়সীমা বেঁধে দিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রথমত, এই তদন্ত করতে গিয়ে গাজিয়াবাদ থেকে সিবিআই যে হার্ডডিস্ক উদ্ধার করেছিল সেই হার্ডডিস্ক এর মধ্যে ওয়েমারের যত পিডিএফ আছে তা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে কুল সার্ভিস কমিশনকে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ এখনো পর্যন্ত মানেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন। কেন তা মানা হয়নি তা জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বিচারপতি দেবাংশু বসাকের দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তা প্রকাশের নির্দেশ দিল। দ্বিতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যারা অযোগ্য বা দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে এসএসসির চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের বেতন বন্ধের জন্য কি ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার সেটাও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে রাজ্যকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগে রাজ্যের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যারা অযোগ্য বা দুর্নীতিগ্রস্ত বলে চিহ্নিত তাদের এখনো বেতন তালিকায় নাম রেখে বেতন দিচ্ছে রাজ্য সরকার। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্যের বক্তব্য জানতে চান। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যে রিপোর্ট তিনি চেয়েছেন সেখানেই এ নিয়ে কি ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ করা হয়েছে বা জেলা স্তরে স্কুল পরিদর্শকের দপ্তরে কি কি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? সব কিছুই বিস্তারিতভাবে জানাতে হবে রাজ্যকে। তৃতীয়ত, গত বছরের ২২ এপ্রিল বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ার রিপোর্ট সিবিআই আদালতে জমা দিতে হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সিবিআই সেই রিপোর্ট জমা দেয়নি। সিবিআই এর আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী রিপোর্ট জমা না দেয়ার কথা আদালতে স্বীকার করে নেন। এক্ষেত্রেও সিবিআই এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে। বিচারপতি বসাক ৪০ ঘন্টার মধ্যে সিবিআই কেউ এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে আদালতের নির্দেশ ও চাকরি হারাদের চাপে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা তৈরিতে যখন ব্যস্ত স্কুল সার্ভিস কমিশন ঠিক তখনই প্রথমে হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অবমাননার অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের স্নায়ুর চাপ আরও বাড়ালো কলকাতা হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, ২০১৬ এসএসসি মামলায় হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ যা যা রায় দিয়েছিল সেই রায়কে বহাল রেখেই এসএসসির পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ফলে শুধু সুপ্রিম কোর্টই নয় হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশক অমান্য করেছে রাজ্য সরকার স্কুল সার্ভিস কমিশন এমনকি সিবিআই বলে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে নতুন করে এই মামলা করা হয়েছিল। যে মামলা প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৪৮ ঘন্টার ডেট লাইন দিল রাজ্য, এসএসসি ও সিবিআইকে।