৪ রাজ্যের ৩৬৯ নির্বাচন কর্মীর প্রশিক্ষণ দিল্লিতে
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ভুতুড়ে ভোটার বা ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড নম্বর ইস্যু এখনও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। নির্বাচন মুখী বিহারের সঙ্গে হরিয়ানা উত্তর প্রদেশ এবং বৃহত্তর দিল্লির ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ইআরও এবং বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-দের প্রশিক্ষণ দিল নির্বাচন কমিশন। মূলত ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি, ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ফর্ম হ্যান্ডলিং, ইভিএম ও ভিভিপ্যাট পরিচালনাসহ ফিল্ড লেভেলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় দিল্লির ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডেমোক্রেসি এন্ড ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট এর অডিটোরিয়ামে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত তৃণমূল স্তরের ৩৬৯ জন এই ধরনের নির্বাচনী কর্মীদের মিক্সড ব্যাচ প্রশিক্ষণশালায় উপস্থিত ছিলেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ইআরও, বিএলও এবং বিএলএ বা বুথ লেভেল এজেন্টদের ভূমিকার কথা বুঝিয়ে দিয়ে নির্ভুল এবং সর্বশেষ সংশোধিত ভোটার তালিকা তৈরীর প্রয়োজনীয়তার কথা বুঝিয়ে দেন। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং ১৯৬০ সালের নির্বাচকদের রেজিস্ট্রেশন বিধি কঠোরভাবে এই তৃণমূল স্তরের নির্বাচন প্রক্রিয়া সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের পালন করতে হবে বলেও নির্দেশ দেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। উল্লেখযোগ্য চলতি এপ্রিল মাসের প্রথমেই নির্বাচনমুখী বিহারের দশটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের ২৮০ জন বুথ লেভেল এজেন্টদের দিল্লিতে এই ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেদিনও তাদের ভূমিকা ও গুরুত্ব এবং কাজের পদ্ধতি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। সংশোধিত ভোটার তালিকার খসড়ার ফার্স্ট আপিল অর্থাৎ জেলা শাসক বা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে অভিযোগ পত্র জমার পর কি করনীয় এবং সেকেন্ড আপিল অর্থাৎ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে সংশোধনের খসড়ার নিয়ে অভিযোগ পত্র জমা পড়লে কি করনীয় সেটাও এই প্রশিক্ষণশালায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে সাম্প্রতিক সর্বশেষ সংশোধিত ভোটার তালিকা নিয়ে শুধু মাত্র মহারাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোন রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে কোন অভিযোগ জমা পড়েনি। ফাস্ট আপিল এর ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্রে ৮৯টি অভিযোগ জমা পড়েছিল এবং দ্বিতীয় আপিলের ক্ষেত্রে মাত্র একটি অভিযোগ জমা পড়ে। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টির কোন কারণ নেই বলেও জানিয়ে দেন প্রশিক্ষকরা।
চলতি বছরেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন এবং আগামী বছরে রুটিন মাফিক পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। ভোটার তালিকার সংশোধন একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। যেকোনো নির্বাচন পরিচালনার আগেই নতুন করে ভোটার তালিকার সংক্ষিপ্ত সংশোধন করা হয় যাকে নির্বাচনী পরিভাষায় সামারি রিভিশন বলা হয়। কাজ করতে গিয়ে যাতে কোন ভুল ত্রুটি না হয় সেদিকেই মূল লক্ষ্য নির্বাচন কমিশনের। কারণ কলকাতা থেকে তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার তালিকায় ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড নম্বর বা ভুতুড়ে ভোটার নিয়ে যে ইসু তুলেছিলেন পরবর্তীতে তা গোটা দেশের কাছে একটি রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। সংসদের উভয়পক্ষ শুধু নয়, দিল্লির রাস্তাতেও এবং রাজ্যে রাজ্যে জেলায় জেলায় এ নিয়ে আন্দোলন তৈরি হয়। এমনকি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব কে নির্বাচন সাধনের ডেকে এই সমস্যার সমাধান কিভাবে করা যায় তা নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ সহ হরিয়ানা,গুজরাতসহ একাধিক রাজ্যে এই ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড নম্বরের সন্ধান মেলে এবং এ রাজ্যেই ৬০০ বেশি এ ধরনের কার্ড বাতিল করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। স্বাভাবিকভাবেই আসন্ন নির্বাচন গুলিতে যাতে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়। তাই আগেই ভাবেই বারংবার এই ধরনের কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত সেই তৃণমূল স্তরের নির্বাচন কর্মীদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন।