ধর্মীয় ভক্তির উন্মাদনায় রঙিন হওয়ার কথা ছিল গোয়ার শিরগাও গ্রামের শ্রী লাইরাই দেবী মন্দির প্রাঙ্গণ। কিন্তু উৎসবের সেই আবহেই ঘটে গেল ভয়াবহ এক বিপর্যয়। শনিবার ভোর রাতে মন্দিরের বার্ষিক শোভাযাত্রায় ভিড়ের চাপে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল অন্তত ৭ জনের, আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। শোকস্তব্ধ গোয়া, স্তব্ধ হাজার হাজার ভক্তের হৃদয়।
প্রত্যেক বছর মে মাসে আয়োজিত হয় এই ‘লাইরাই যাত্রা’। গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটক থেকে আগত অসংখ্য ভক্ত একত্র হন এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবে। দিনভর ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পর মধ্যরাতে হয় গোল নৃত্য, এবং ভোরবেলা ভক্তরা খালি পায়ে হেঁটে যান গরম কয়লার উপর দিয়ে। অনেকেই একাধিকবার সেই অগ্নিপথে পা রাখেন, যা তাঁদের বিশ্বাসে ভক্তির এক চূড়ান্ত প্রকাশ।
তবে এবারের যাত্রা আর স্বাভাবিক থাকেনি। হঠাৎ করেই ভিড়ের চাপে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। মুহূর্তেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ৭ জনের, আহতরা পড়ে থাকেন মন্দিরের চত্বরেই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স। গুরুতর আহতদের মধ্যে দু’জনকে স্থানান্তরিত করা হয় গোয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বাকিদের চিকিৎসা চলছে স্থানীয় হাসপাতালে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত তড়িঘড়ি হাসপাতালে পৌঁছে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ তিনি লিখেছেন, “লাইরাই যাত্রায় পদপিষ্টের ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সমস্ত রকম সাহায্য করা হবে।” তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তাঁর। প্রধানমন্ত্রী ঘটনাটির খোঁজ নিয়েছেন ও সবরকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
গোয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিৎ রানে জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়েই পাঁচটি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ICU ও ভেন্টিলেটর, মোতায়েন রয়েছেন অতিরিক্ত চিকিৎসক। আহতদের জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকার তৎপর বলে জানান তিনি।
শান্তি, ভক্তি ও আত্মসমর্পণের এক গর্বিত পরম্পরার অংশ এই শিরগাও যাত্রা। কিন্তু এবার সেই উৎসবই রেখে গেল রক্তাক্ত ক্ষতচিহ্ন। আপাতত তদন্ত চলছে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার জন্য। গোয়ার মানুষ, এবং সমগ্র দেশ প্রার্থনা করছে—আবার যেন কোনও ধর্মীয় উৎসব, এমন এক মর্মান্তিক ঘটনায় কলঙ্কিত না হয়।