কোনও নির্জন রানওয়ে নয়, নয় কোনও সামরিক ঘাঁটি—এবার ভারতের যুদ্ধবিমান দেখা গেল একেবারে জনসমাগমপূর্ণ রাজপথে। শুক্রবার রাতে উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুর জেলার গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে অনুষ্ঠিত হল ভারতীয় বায়ুসেনার এক বিরল এবং দুর্ধর্ষ মহড়া। রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ‘ল্যান্ড অ্যান্ড গো’ ড্রিলের অংশ হিসেবে রাজপথেই উড়ল একের পর এক যুদ্ধবিমান—রাফায়েল, সুখোই-৩০, মিরেজ-২০০০, জাগুয়ার, এমআই-১৭ হেলিকপ্টার এবং সি-১৩০ জে সুপার হারকিউলিসের মতো শক্তিশালী বিমানের গর্জনে কেঁপে উঠল রাজপথ ও আশপাশের জনপদ।
প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের এক নির্দিষ্ট অংশকে এই মহড়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। শুধু যুদ্ধবিমানের ওঠানামাই নয়, সঙ্গে ছিল জরুরি উদ্ধারকাজেরও অনুশীলন। মহড়ায় অংশ নেওয়া বিমানগুলোর মধ্যে কিছু ছিল পরিবহনবিমান ও হেলিকপ্টার, যারা বিপর্যয় মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু যুদ্ধ প্রস্তুতিই নয়, বরং এই রাতের মহড়া একটি বার্তা—যে ভারত প্রস্তুত, যেকোনও মুহূর্তে শত্রুপক্ষের মোকাবিলায় প্রয়োজনে রাতের অন্ধকারেও চমকে দিতে পারে তারা। বিশেষত, পহেলগাঁওতে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনের সাম্প্রতিক হামলার পরে গোটা দেশ ক্ষোভে ফুঁসছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও জানিয়ে দিয়েছেন, নিরীহ পর্যটকদের ধর্ম দেখে হত্যার বদলা ভারত অবশ্যই নেবে। সেই প্রেক্ষাপটে এই মহড়ার তাৎপর্য আরও গভীর।
শুক্রবার সকালে একবার মহড়ার ঝলক দেখা গেলেও, রাতের অন্ধকারে এত বড় আকারে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের অনুশীলন এই প্রথম। রাজপথের উপর এই রকম অপারেশন চালানোর দক্ষতা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, জরুরি পরিস্থিতিতেও ভারতীয় বায়ুসেনার প্রস্তুতির স্তরকে তুলে ধরে।
বিমানগুলোর প্রবল শব্দে আশপাশের এলাকার মানুষজন ছুটে আসেন রাস্তায়। কেউ মোবাইলে ভিডিও করেন, কেউ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন আকাশের দিকে। রাতের আকাশে এমন শক্তির প্রদর্শন, এমন দৃশ্য অনেকেই কোনও দিন দেখেননি। গোটা দেশ আজ আরও একবার বুঝে গেল—সীমান্তে শুধু অস্ত্র নয়, আকাশেও ভারতের প্রতিরক্ষা এখন প্রস্তুত ও অপ্রতিরোধ্য।