দরজা, শুধু একখণ্ড কাঠ বা ধাতু নয়, অনেক সময় এটি হয়ে ওঠে রহস্য, ইতিহাস ও কিংবদন্তির প্রতীক। পৃথিবীর নানা প্রান্তে এমন কিছু দরজা রয়েছে, যা যুগের পর যুগ ধরে তালাবদ্ধ, আর তার পেছনে লুকিয়ে আছে গা ছমছমে কাহিনি, রহস্যময় ইতিহাস ও লোকবিশ্বাস। আশ্চর্যের বিষয় হল, বিশ্বের এই পাঁচটি রহস্যময় দরজার তালিকায় ভারতেরও রয়েছে দুটি দরজা, যা আজও খোলা হয়নি!
১. চিনের টেরাকোটা সেনাবাহিনীর পাহারারত দরজা: ১৯৭৪ সালে চিনের জিংওয়া প্রদেশে এক কৃষক পরিবার পাতকুয়ো খুঁড়তে গিয়ে খুঁজে পান পোড়ামাটির মূর্তি। এরপর খননের মাধ্যমে সামনে আসে এক বিশাল টেরাকোটা সেনাবাহিনী—৮ হাজার সৈনিক, ১৩০টি রথ, ১৫০ জন ঘোড়সওয়ার ও ৫০০টি ঘোড়া। এই প্রাচীন যোদ্ধারা পাহারা দিচ্ছে এক দরজাকে, যেটি আজও খোলা হয়নি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ওই দরজা খুললেই নামবে ভয়ঙ্কর অভিশাপ। সেই কুসংস্কারের প্রতি সম্মান জানিয়েই দরজাটি আজও অরক্ষিত।
২. মিশরের গিজার পিরামিডের অদৃশ্য রহস্য: বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি, গিজার পিরামিড নিয়ে বহু তত্ত্ব, কল্পনা আর বিতর্ক রয়েছে। কারও মতে এটি ভিনগ্রহের প্রাণীর তৈরি, কেউ বলেন মরুভূমির বালির নিচে লুকিয়ে আছে প্রকৃত রহস্য। সব দরজা খুলে দেখা হলেও, একটি বিশেষ দরজা আজও রয়ে গেছে বন্ধ। মিশর সরকার নিজেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছে—এই দরজা খোলা যাবে না। কেন? কেউ জানে না। কিন্তু রহস্যময়তার আস্বাদ এখানে গা ছমছমে করে তোলে ইতিহাসপ্রেমীদের।
৩. তাজমহলের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা অদেখা দরজাগুলি: শাহজাহানের প্রেমের নিদর্শন, তাজমহলের মোট দরজা ১০৮৯টি। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু দরজা আজও খোলা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ওই দরজাগুলি খোলা হয়, তবে সেখান থেকে নির্গত কার্বন মনোঅক্সাইড মার্বেলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে গঠনগত ক্ষতি ঘটাতে পারে। আবার, লোককথা বলে, একটি দরজার পিছনে মুমতাজকে এমনভাবে সমাধিস্থ করা হয়েছে, যেভাবে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। দরজা খুললেই নেমে আসতে পারে চরম অভিশাপ! এই কুসংস্কার, বিজ্ঞান ও ইতিহাস—তিনের মিশ্রণেই দরজাগুলি আজও অরক্ষিত।
৪. পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের সপ্তম দরজা: কেরালার ত্রিবাঙ্কুর রাজবংশ নির্মিত পদ্মনাভস্বামী মন্দিরকে ধনী মন্দির বলা হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মন্দিরের ৬টি গোপন কক্ষ খুলে ১ লক্ষ কোটিরও বেশি সম্পদ উদ্ধার হয়। কিন্তু সপ্তম দরজা? সেই দরজাটি আজও তালাবদ্ধ। শোনা যায়, এটি সরাসরি ‘নাগদের রাজ্যে’ প্রবেশের পথ। স্থানীয়দের মতে, দরজাটি খুললেই ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারে। তাই এই দরজাটিও আজ অবধি রহস্যে মোড়া।
৫. কানাডার বাল্ফ স্প্রিং হোটেলের ৮৭৩ নম্বর ঘর: একটি বিলাসবহুল হোটেল, যেখানে প্রতিটি ঘরেই অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়—শুধু একটি বাদে, ৮৭৩ নম্বর কক্ষ। এই ঘরে একদা এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটে—এক ব্যক্তি স্ত্রী ও শিশুকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করেন।এরপর থেকেই ঘর থেকে আসে কান্নার শব্দ, ফিসফিস আওয়াজ, এমনকি কিছু অতিথি সেখানে প্রবেশের পর নিখোঁজও হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ। হোটেল কর্তৃপক্ষও সেই ঘরের দরজা বন্ধ রাখাকেই নিরাপদ মনে করে।
রহস্য আমাদের মুগ্ধ করে, চমকে দেয়, আবার ভয়ও দেখায়। কিন্তু এই পাঁচ দরজার মতো ইতিহাস, লোককথা ও বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের এমন অপূর্ব সংমিশ্রণ খুব কমই দেখা যায়। দরজাগুলি হয়তো একদিন খুলবে, অথবা না-ও খুলতে পারে কখনও। কিন্তু যতদিন না খোলা হচ্ছে, ততদিন মানুষের কল্পনা, গবেষণা আর চমক অব্যাহত থাকবে।