অভিজিৎ বসু
সারা বিশ্ব জুড়ে এই মিডিয়াকুল স্বাধীন ভাবে হাত পা ছড়িয়ে কাজ করবে নিজের ইচ্ছামত। কোনো খবরদারি থাকবে না। দাদাগিরি থাকবে না। কারুর নজরদারি থাকবে না। কেউ রিজয়ন্ডার দিয়ে বলবে না যে কেনো এমন ভুল লেখা হয়েছে এখুনি ক্ষমা চাও হাতজোড় করে। এসব সত্যিই হলেও আমি বলছি এসব ঠিক নয়। এই লেখা প্রকাশ করা যাবে না। তুলে নাও এই লেখা মার্জনা প্রকাশ করে বলো অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।
কিন্তু শুধুই নিশ্চিন্তে হাত পা ছড়িয়ে সংবাদপত্র তার কাজ করবে নিশ্চিন্তে। এমন একটা স্বপ্ন রাজ্য প্রতিষ্ঠা হবে ভাবলেই কেমন যেন বেশ ভালো লাগে আমাদের সবার যারা এই মিডিয়া নামক শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত এক বিশেষ প্রজাতির জীব। কিন্তু আদতে রাম রাজ্যের মত সেই স্বপ্ন রাজোর কথা যেমন ভাবতে ভালো লাগে বেশ কিন্তু সেই স্বপ্ন রাজোর দেখা মেলে না কোথাও। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য সারা বিশ্ব জুড়েই প্রতি বছরের মতো এই বছরও ৩ মে বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ডে পালিত হচ্ছে। ধুমধাম করে নানা সেমিনার, আলোচনা হচ্ছে এই দিনে।
বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ডে হল তথ্যের প্রবাহ বজায় রাখতে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রচারে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সংস্থাগুলির প্রচেষ্টার প্রশংসা করার একটি সুযোগ। এটি একটি অনুস্মারক যে গণমাধ্যম খাতের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের রয়েছে। সেই দিকে নজর দিয়ে তাদেরকে রক্ষা করা।
২০২৫ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স-এ ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে ১৫১তম স্থানে। এই তালিকায় ভারত তার প্রতিবেশী দেশ নেপাল (৯০তম), মালদ্বীপ (১০৪তম), শ্রীলঙ্কা (১৩৯তম) ও বাংলাদেশ (১৪৯তম)-এর চেয়েও পিছিয়ে। তবে ভুটান (১৫২তম), পাকিস্তান (১৫৮তম), মিয়ানমার (১৬৯তম), আফগানিস্তান (১৭৫তম) ও চীন (১৭৮তম)-এর তুলনায় ভারতের অবস্থান কিছুটা ভাল।এই সূচক প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা Reporters Sans Frontières (RSF) বা Reporters Without Borders। ২০০২ সাল থেকে প্রতিবছর তারা এই সূচক প্রকাশ করে আসছে।
২০২৩ সালে ভারতের অবস্থান ছিল ১৬১তম এবং ২০২৪ সালে ১৫৯তম। যদিও চলতি বছরে ভারতের অবস্থান কিছুটা উন্নত হয়েছে, তা সত্ত্বেও দেশটি এখনও “অত্যন্ত গুরুতর” অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলেছে, ভারতে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের হাতে মিডিয়ার মালিকানা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় গণমাধ্যমের বহুধ্বনিকতা হুমকির মুখে পড়েছে।
ভারত নিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের গণমাধ্যম এক “অঘোষিত জরুরি অবস্থার” মধ্যে পড়েছে। তাঁর দল বিজেপি ও দেশের প্রভাবশালী মিডিয়া পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শিল্পপতি মুকেশ অম্বানি ৭০টিরও বেশি মিডিয়া হাউসের মালিক, যেগুলি কমপক্ষে ৮০০ মিলিয়ন ভারতীয় অনুসরণ করে। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর “ঘনিষ্ঠ বন্ধু”বলেও বর্ণনা করেছে RSF। ২০২২ সালে আদানি গ্রুপ NDTV অধিগ্রহণ করলে মূলধারার মিডিয়ায় বহুধ্বনিকতার অবসান ঘটে বলে মন্তব্য করা হয়েছে রিপোর্টে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানিকেও মোদীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে “গোদি মিডিয়া”-র উত্থান ঘটেছে — যেগুলি জনতাবাদ ও বিজেপিপন্থী প্রচার চালিয়ে থাকে। এই চাপ ও প্রভাবের মাধ্যমে ভারতের বহুধ্বনিক সংবাদমাধ্যম ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
আমাদের দেশ ভারতবর্ষ জুড়েও তো চলছে বর্তমানে এই নানা বিধিনিষেধ, নজরদারি আর নানা ধরনের অত্যাচার, হুমকি, ভয় দেখানো কত কিছু। রাজ্য স্তরে, কেন্দ্র স্তরে সর্বত্র চলছে বর্তমানে এই মিডিয়া নামক নখদন্তহীন জীবটার ওপর কেমন যেন একটা চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা। যে চাপে মাথা নোয়াবে সংবাদপত্র, মাথা নোয়াবে টিভি মিডিয়া, মাথা নিচু করে কলম পিষবে, খবর করবে তারা মুখ বুজে সেই সব স্বাধীনচেতা সাংবাদিককূল। আর সেটা না হলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে তারা পেটের ভাত মারা হবে তাদের। কাজ চলে যাবে তাদের। বেকার করে দিয়ে বলা হবে বশ্যতা স্বীকার করো অবিলম্বে।
আর না হলে তারপর রাষ্ট্র তার নিজের ক্ষমতায় গ্রেফতার করবে বলবে রাষ্ট্র ও দেশের বিরোধী এই সাংবাদিক। তার চিন্তা ভাবনা দেশ বিরোধী। সত্যিই অসাধারন এই অনুভূতি একজন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীর। যেখানে সারা পৃথিবী জুড়ে, দেশ জুড়ে এই দমন পীড়ন চলছে। এর মাঝেই হৈ হৈ করে পালিত হবে বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম দিবস।
যার জন্য আমরা সবাই মিলে স্বপ্ন দেখব যে সত্যিই স্বাধীন ভাবে, স্বাধীন চিন্তা নিয়ে সারা দেশের, বিদেশের এই গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের শরিকরা একটু হাত পা ছড়িয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে কাজ করতে পারবে কোনো রক্তচক্ষু, ভয় ছাড়াই। দেশের মাটিতে, বিদেশের মাটিতে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মৃত্যু হবে না কোনো সাংবাদিকের। এর থেকে ভালো দিবস পালন আর কি হতে পারে বলুন। জয় বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম দিবসের জয়।