‘অপারেশান সিঁদুর’ যে বিজেপির ভোটের বাক্স ভরাতে ঘরে ঘরে সিঁদুর পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রমে পৌঁছবে শুরু থেকেই তা আঁচ করতে ভুল করেনি বিরোধী শিবির। কিন্তু অপেক্ষা করছিল সঠিক সময়ের। আর তাই, প্রধানমন্ত্রী মোদী গুজরাত দিয়ে রোড-শো শুরু করতেই সিঁদুর রাজনীতির পাল্টা মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিরোধী নেতৃত্ব। কংগ্রেস রোজ আক্রমণ শানাচ্ছে বিজেপির সিঁদুর অভিযানকে। মমতাও মোদীর সভার পর বিজেপির সিঁদুর-রাজনীতির দফারফা করেছেন। এ বার সেই লাইনেই মুখ খুললেন প্রাক্তন ভোট কুশলী তথা বিহারে জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর। তাঁর একটাই প্রশ্ন, ‘যুদ্ধবিরতি কেন করলেন? এখন বাড়ি বাড়ি সিঁদুরদানি পৌঁছে কী হবে?’ বছরের শেষে বিহারে ভোট। ‘অপারেশন সিঁদুর’ বিহার ভোটে বিজেপির বড় অস্ত্র হতে চলেছে। তা বুঝেই পিকে এ বার নতুন ন্যারেটিভ নামালেন।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ বিরোধী চুক্তি, ট্রাম্পের মধ্যস্থতা নিয়ে সরব কিশোর। পূর্ব চম্পারণের জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দাগলেন তিনি। নেপথ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত! যুদ্ধ থেকে বাঁচতে পাকিস্তান যখন পিছপা হচ্ছিল, তখন সাত তাড়াতাড়ি যুদ্ধ থামাতে রাজি হল কেন ভারত? কেন্দ্রের যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ভাবেই প্রশ্ন ছুড়লেন প্রশান্ত কিশোর।
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের একটি বক্তব্য উল্লেখ করে প্রশান্ত কিশোর বলেন, “আমাদের বিদেশমন্ত্রী একজন শিক্ষিত ও বিচক্ষণ মানুষ, আমি ওর প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তিনি নিজেই বলেছেন, যুদ্ধবিরতি পাকিস্তানের অনুরোধে হয়েছে। তা হলে এটা তো পরিষ্কার, পাকিস্তান হারছিল, তাই ওরা যুদ্ধ থামাতে চাইছিল। এমন হলে আমাদের আরও দু’দিন অপারেশন চালিয়ে পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়া উচিত ছিল।”
ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই নিয়ে প্রশান্ত কটাক্ষ করে বলেন, “হয়তো ট্রাম্প ভাবছেন, এর জন্য শান্তির পুরস্কার পেয়ে যাবেন। কিন্তু আমি ট্রাম্পকে নয়, আমাদের বিদেশমন্ত্রীকেই বিশ্বাস করি।” জনসভায় তিনি দাবি করেন, “সরকার সাইরেন বাজিয়ে মহড়া করাল, সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষ প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তার পর যুদ্ধবিরতি? এখন সিঁদুরদানি বিলিয়ে আর কী লাভ?” ঠিক এই ভাষাতেই পূর্ব চম্পারণের জনসভা থেকে কেন্দ্রকে বিঁধলেন প্রশান্ত কিশোর।
জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, “এখন যুদ্ধবিরতি হয়ে গিয়েছে। তার পরে জনগণকে বোকা বানানোর কী দরকার? যাঁরা বলছেন, আমরা জিতে গেছি, তাঁরা ভুল বলছেন। সিঁদুর বিলিয়ে দেশের জনমতকে প্রভাবিত করা যাবে না।” প্রশান্ত কিশোরের এই মন্তব্য কেন্দ্রে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, নাকি আগামী নির্বাচনের আগে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুকে হাতিয়ার করে জনমত সংগ্রহের কৌশল?