বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিল্পীর জীবনের নানা বাঁকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বহু মধুর স্মৃতি। তবে কিছু স্মৃতি থেকে যায় মনে গভীরে। ঠিক তেমনই একটি স্মৃতি আজও মনের মণিকোঠায় রেখে দিয়েছেন আঁখি আলমগীর, তাও আবার ভারতের অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে।
শুধু কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই নন, শৈশবে ‘ভাত দে’ ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন আঁখি। কিন্তু বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়ে চিকিৎসক হবেন। শেষমেশ গানকেই সঙ্গী করে গায়িকার জীবনকে বেছে নিয়েছেন আঁখি। আর ছোটবেলা থেকেই সিনেমাপ্রেমী এই গায়িকার প্রিয় দুই নায়কের নাম, টম ক্রুজ আর মিঠুন চক্রবর্তী। মিঠুনের সব সিনেমা দেখেছেন। এমন কি ঢাকার নিউমার্কেট থেকে তাঁর পোস্টার কিনে ঘরে টাঙিয়েও রেখেছিলেন।
আঁখি তখন খুব ছোট। একবার ঢাকা ক্লাবে মিঠুনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল আঁখির পরিবারের। মিঠুনের সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দে ভরে উঠেছিল ছোট্ট আঁখির মন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাবা আলমগীর। তাই বাতিল হয় সেই সন্ধ্যা। নিজের হতাশার কথা ফেসবুক পোস্টে জানিয়ে আঁখি লেখেন, “সে দিন কিন্তু আমার ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। গোপনে খুব কেঁদেছিলাম।” তবে সেই না-পাওয়া মুহূর্তের ক্ষত ভুলিয়ে দিয়েছিল এক বিশেষ সাক্ষাৎ। ২০০৬ সালে, লন্ডনে। সেখানে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে পারফর্ম করেন আঁখি এবং মিঠুন চক্রবর্তী। সঙ্গে ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন, সামিনা চৌধুরী, আসিফ আকবর, মান্না, মৌসুমী প্রমুখ। সেই অনুষ্ঠানের মাঝে গ্রিনরুমে আড্ডায় মাতেন সবাই। নিজের ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে প্রিয় নায়কের একাধিক ছবিও তুলেছিলেন আঁখি। কিন্তু মিঠুনকে নিজের ভক্তির কথা বলতে পারেননি কখনও। ফেসবুকে স্মৃতিচারণ করে আঁখি লেখেন, “আমি যে তাঁর কত বড় ভক্ত, এমন কী জাতীয় পুরস্কার পাওয়া ও অখ্যাত হলেও দুর্দান্ত অভিনয়ের সিনেমাগুলো সবই দেখা। এ সব কিছুই বলা হয়নি সে দিন। আমি বরং দায়সারা উত্তর দিয়ে চুপচাপ ঘরের কোনে বসেছিলাম।”
কিন্তু এক অবাক করা মুহূর্ত তখনও বাকি। আঁখি বলেন, “তিনি আমাকে চা বানিয়ে খাওয়ালেন গ্রিন রুমে!” প্রিয় নায়কের হাতের বানানো চা খাওয়া, একই মঞ্চে পারফর্ম করা, সব মিলিয়ে সে দিনের অভিজ্ঞতা আঁখির কাছে এক স্বপ্নপূরণের মতোই। ফেসবুকে প্রকাশিত ছবিগুলো পোস্ট করে আঁখি লেখেন, “প্রিয় অভিনেতার সঙ্গে একই স্টেজে পারফর্ম করছি, সেই আনন্দ আমাকে আপ্লুত করেছিল। আজ ছবিগুলো সে দিনের চেয়েও দামি মনে হয়।”
চার দশকের বেশি সময় গান আর বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত আঁখি। আর তাঁর এই যাত্রাপথে মিঠুন চক্রবর্তী যেন রয়ে গেছেন এক চিরন্তন ভালোবাসার জায়গায়। কখনও গোপনে চোখের জল ফেলা, আবার কখনও প্রিয় নায়কের হাতের চা, এ ভাবেই আঁখির জীবনে নায়ক হয়ে থাকবেন মিঠুন।