সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
ওয়েব কাস্টিংয়ের কাজে টেন্ডার দেওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতাকে যখন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন তৃণমূলের দুই মন্ত্রী তখন বিগত দিনে এই টেন্ডারকে ঘিরে নিয়মের অভিযোগ তুলে নয়া বিতর্ক উস্কে দিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল।
বুধবার রাজ্য বিধানসভায় জিরো আওয়ারে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য নির্বাচনী সামগ্রী সরবরাহের টেন্ডারে বাংলার সংস্থাগুলোকে উপেক্ষা করে গুজরাটের একটি সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। বৃহস্পতিবার সেই অভিযোগকে অস্বীকার করে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল জানান, “নদিয়া জেলার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশ দিয়েছিল সেই নির্দেশ মোতাবেক ই-টেন্ডার করা হয়েছিল। সারা দেশ থেকে সকলেই যাতে এই ই-টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারে সেই ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। ই-টেন্ডার যে মাপকাঠি তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল তাকে পূরণ করেই আহমেদাবাদের এই সংস্থাটি বরাত পেয়েছে।” বরং মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের পাল্টা অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনে ২০১৬ সাল থেকে ওয়েব কাস্টিং-এর কাজ করা হয়নি।” আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরে নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে ওয়েব কাস্টিং এর বরাত পাইয়ে দেওয়ার টেন্ডার হল কিভাবে? টেন্ডার প্রক্রিয়া অবৈধ জেনেও বারবার একই সংস্থা কিভাবে ওয়েব কাস্টিং-এর কাজের বরাত পেয়েছিল?
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সাম্প্রতিক অতীতে অর্থাৎ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের যে সংস্থা এই বরাত পেয়েছিল সেই সংস্থা টেন্ডার চুক্তি ভঙ্গ করেছে অনেক জায়গাতেই। ওয়েব কাস্টিংয়ের অনেক জায়গাতেই একই ছবি বারংবার দেখানো হয়েছে, অনেক জায়গাতেই আবার ব্ল্যাঙ্ক থেকে গিয়েছে তো আবার অনেক জায়গাতেই ব্ল্যাক হয়ে গিয়েছে। এর ফলেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জন্য তাদের যে বরাত দেওয়া হয়েছিল সেখান থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা পেনাল্টি হিসেবে কেটে নেওয়া হয়েছে। যে সংস্থার কাজের মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন থেকে গিয়েছে প্রথম থেকেই, তাঁরা কিভাবে বছরের পর বছর এই একই কাজের বরাত পেয়েছে? প্রশ্ন তা নিয়েই। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন থেকে ওই সংস্থাই ২০২৪ সাল পর্যন্ত নির্বাচনের কাজে ওয়েব কাস্টিং এর কাজ করে এসেছে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে প্রত্যেকবার নির্বাচনের সময় ওয়েবকাস্টিং কীভাবে হবে তা নির্ধারণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানায়। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের আধিকারিক থেকে শুরু করে এনআইএস-এর আধিকারিক এবং রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের আধিকারিক সহ অনেকেই এই কমিটিতে থাকেন। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কীভাবে বছরের পর বছর একটি কোম্পানি তাঁদের কাজের শর্ত ভঙ্গ করার পরেও বারবার বরাত পেয়ে গিয়েছে ওয়েব কাস্টিং-এর কাজের জন্য। কিন্তু টেন্ডারের জন্য শর্তপূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েও কীভাবে একই কাজের বরাত পেয়েছে একটি সংস্থা তা নিয়ে এবার আসরে নামতে চলেছে রাজ্য বিজেপি বলেও সূত্রের খবর। উল্লেখ্য, ২০২১ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় বিজেপি বারবার এই ওয়েব কাস্টিংকে কেন্দ্র করেই অভিযোগ তুলেছিল।