গোটা বিশ্বজুড়ে চিরকালই দাদাগিরি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে আমেরিকা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঠান্ডাযুদ্ধ পাল্টে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীর শক্তির ভরকেন্দ্র। নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই ইউএসএসআরের পতনের পর ফের নিজেদের ক্ষমতার বৃত্ত বাড়াতে শুরু করে জর্জ ওয়াশিংটনের দেশ।বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী সামরিকবাহিনী এবং অর্থনীতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে বলা হয় বিশ্বের সবথেকে ক্ষমতাধর ব্যক্তি৷ আমি যেমন চাইব বিশ্ব তেমনভাবে চলবে – এই মুহূর্তে এমন ব্যবস্থারই যেন সার্থক রূপ হয়ে উঠতে চলেছেন ২য় বার ক্ষমতার মসনদে বসা ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সদ্য তেহরানের হাতে পরমাণু বোমা এসে গেছে এমন আশঙ্কা তৈরি করে বন্ধু দেশ ইজরায়েলের সঙ্গী হয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছেন ট্রাম্প। ১৩ জুন শুরু হওয়া ১২ দিনের সংঘর্ষে তেহরানকে ইজরায়েল যখন কব্জা করতে পারছে না ঠিক তখনই ইরানের তিন পরমানু কেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তারপরেই বড় দাদার মত নরমে গরমে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি।তবে এখানেই শেষ নয়, তিনি রক্ষা না করলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইকে ইজরায়েল মেরে ফেলত বলেই ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই দাদাগিরির পাশাপাশি রক্ষাকর্তার ভূমিকাকে সরাসরি অস্বীকার করেছে তেহরান। ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি শনিবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কড়া নিন্দা করে বলেছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্যিই কোনও চুক্তি করতে চান, তাহলে তাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গ্র্যান্ড আয়াতোল্লাহ খামেনেই-এর প্রতি অসম্মানজনক ও অগ্রহণযোগ্য ভাষা বন্ধ করতে হবে। একবার গরম হয়ে বোমা মারার পর ফের নরম হয়ে ট্রাম্প ইরানকে আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ট্রাম্প দাবি করলেও, ইরান জানিয়ে দিয়েছে যে তারা আমেরিকার সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছে না।
তবে শুধু ইরান নয় ২য় বার ক্ষমতায় এসেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে উঠেপড়ে লেগেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-জেলেনেস্কির বিতর্কিত সংঘাতের পাশাপাশি তাঁর মনোমত কাজ না হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেদ্ধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।মাস খানেক আগেই সেই দাদাগিরির অংশ হিসেবেই বিশ্বজুড়ে শুল্ক যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিলেন এই খেয়ালি রাজা।
তবে ‘খেয়ালি’ বলে একটু বদনাম হলেও সে খেয়ালের একটা সুর নির্দিষ্ট তারে বাঁধা আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।সে সুর হল – বিশ্ব চুলোয় যাক, সব কিছুর আগে আমেরিকা। সেই কারনেই মার্কিন দেশ থেকে বিদেশি বিতাড়ন থেকে শুরু করে বিদেশী পণ্যের উপর বিপুল শুল্ক চাপিয়ে ডলারের পাহাড় বানানোর পথে নেমেছেন ট্রাম্প।এই পরিকল্পনার পিছনে রয়েছে আরও ক্ষমতায় ঠিকে থাকার ভাবনা।কারণ প্রথা ভেঙে তৃতীয়বার মসনদে বসতে চান বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এজন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগ করে নির্বাচনের নিয়ম বদলে দেওয়ার পাশাপাশি চাই বিপুল জন সমর্থন।আর চিরকাল আগ্রাসী নীতির পূজারিদের কাছে অনেকটাই আদর্শ জায়গায় অবস্থান করছেন ট্রাম্প। তার এই বারবার নরমে-গরমে গোটা বিশ্বের ত্রাতা হয়ে ‘ডিলমেকার’ উঠতে চাওয়াটা হয়ত একটা ডিভিডেন্ড দেবে ভবিষ্যতে।