বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির পদার্পণ এখন মেঘে ঢাকা চাঁদের মতো, আছে বইকি, কিন্তু দেখা যায় না! কখনো দিলীপ ঘোষের জুতো হাতে হাঁটা, কখনো সুকান্ত মজুমদারের ইন্সটাগ্রামী সভা, অনেক চেষ্টার পরও বাংলার দরজাটা খুলছে না কিছুতেই। ভোটের মাঠে বিজেপি যেন সেই অতিথি, যাকে কার্ড পাঠানো হয়নি, কিন্তু সে বারবার আসে, হাসিমুখে দাঁড়ায়, শেষে গেট থেকে ফিরেও যায়। আর এবার সেই একই নাটকে এন্ট্রি নিলেন নতুন মুখ! শমীক ভট্টাচার্য। দিল্লির পছন্দের লোক, মিডিয়া-স্মার্ট, কথায় চটপটে, কিন্তু প্রশ্ন একটাই, বাংলায় রাজনীতি করতে গেলে শুধু “ম্যানেজার” হলে হবে? না কি দরকার “মোহল্লার মাস্তান” টাইপ কনেকশন? দিলীপ ঘোষ ছিলেন বিজেপির “আবেগের অ্যাক্টিভেটর”, জুতো হাতে হাঁটতেন, জোরে বলতেন, মিডিয়া কাঁপাতেন। কিন্তু সমস্যা হলো, তাঁর রাজনীতি ছিল একরকম “গর্জে উঠলাম, কিন্তু ভোট পড়ল না”-ঘরানার। কথায় আগুন থাকলেও বুথে বরফ জমে থাকত।
তারপর এলেন সুকান্ত, শান্ত মুখ, শিক্ষিত ইমেজ, কিন্তু মাঠে নামলে এমন এক ধরনের ‘আনপ্লাগড মুড’ আসত, যেন কেউ ভোট নয়, ভিডিও এডিট করতে এসেছে। তাঁর রাজনৈতিক উপস্থিতি ফেসবুক লাইভে থাকলেও, বুথে ছিল একেবারে ‘নেটওয়ার্ক না থাকা’র মতো নিস্তব্ধ। এবার সেই ব্যর্থতার পর বিজেপি আনে শমীক ভট্টাচার্যকে, মিডিয়া-বান্ধব, সংগঠনে অভিজ্ঞ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থাভাজন। দেখে মনে হচ্ছে, বিজেপি এবার বুঝেছে, শুধু হুল্লোড় করে হবে না, চাই ক্যালকুলেটেড ম্যানেজমেন্ট। তবে সমস্যা একটা রয়েই গেছে, বাংলার ভোট ম্যানেজার দেখে হয় না, মন জয় করেই হয়। বাংলার রাজনীতি মানে শুধু স্লোগান নয়, এটা ‘চা-দোকান’ থেকে ‘দুর্গাপুজোর তোরণ’ পর্যন্ত একটা চলমান সম্পর্কের গল্প। মানুষ দেখে কে সাথ দিল, কে পাশে দাঁড়াল, কে কাঁধে হাত রাখল, কে বুঝল তাদের ভাষা, তাদের অভিমান, তাদের রাগ।
শমীক যদি সত্যিই বিজেপিকে দিশা দিতে চান, তাঁকে শুধু সাংবাদিক সম্মেলন নয়, বুথে, ক্লাবে, পাড়ার ফাংশনে, হাটের মোড়ে দাঁড়াতে হবে হয়তো। কর্মীদের হারানো মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে, ‘উপরে নির্দেশ এলেই চলবে’, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে বাস্তবের মাটিতে নামতে হবে। সোজা কথা বললে, বিজেপির রাজ্য সভাপতির পদ এখন আর গৌরব নয়, একটা ‘সাইলেন্ট ট্র্যাপড’ পোস্টিং। দিলীপ এলেন, হুল্লোড় করে গেলেন। সুকান্ত এলেন, হারিয়ে গেলেন। শমীক এলেন, এবার বিজেপির ভরসা তাঁর ওপর, আর বাংলার মানুষ বসে আছে, দেখে নেওয়ার জন্য। এই মুহূর্তে শমীক ভট্টাচার্যের সামনে যা আছে, তা শুধু সুযোগ নয়, এটা এক কঠিন পরীক্ষা। পারলে বিজেপির বাংলা অধ্যায়ে একটা নতুন গল্প শুরু হবে। আর না পারলে?