পুলওয়ামা জঙ্গি হামলায় যে বিস্ফোরক ব্যবহার হয়েছিল, তা কেনা হয়েছিল অ্যামাজন, ফ্লিপকার্টের মতো ই-কমার্স সাইট থেকে। টাকা মেটানো হয়েছিল অনলাইনেই। সম্প্রতি এক রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই কথাই জানিয়েছে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসে অর্থ জোগান ও মানি লন্ডারিং-এর ওপর নজরদারি চালানো সংস্থা ‘ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স’ বা ‘এফএটিএফ’।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার প্রসঙ্গ টেনে এফএটিএফ জানিয়েছে, ওই হামলায় আইইডি বিস্ফোরকের শক্তি বাড়ানোর জন্য যে অ্যালুমিনিয়াম পাউডার ব্যবহার করা হয়েছিল, তা কিনে আনা হয়েছিল একটি ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে।২০১৯ সালের পুলওয়ামার ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের। আর এই হামলার পেছনে ছিল পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
‘ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স’-এর রিপোর্ট অনুসারে, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, হামলার প্রস্তুতিতে সাহায্য করা হয়েছিল ই-কমার্স এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে। এই মামলায় ১৯ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন অনুযায়ী মামলা করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে ৭ জন ছিলেন বিদেশি নাগরিক। তদন্তে গাড়ি, লুকোনো আস্তানা সহ একাধিক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স-এর রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালের গোরখনাথ মন্দিরে হামলার কথাও। সেখানে পুলিশের উপর হামলা চালায় আইএস জঙ্গিদের দ্বারা অনুপ্রাণিত এক ব্যক্তি। তদন্তে জানা যায়, ওই ব্যক্তি ভারতে বসেই পে’পল-এর মাধ্যমে প্রায় ৬.৭ লক্ষ টাকা বিদেশে পাঠিয়েছিল আইএস জঙ্গিদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে। সে ৪৪টি আন্তর্জাতিক লেনদেন করে এবং ভিপিএন ব্যবহার করে নিজের অবস্থান গোপন করে। এসব লেনদেনের অর্থ ভিপিএন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে ভারতীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রদান করেছিল।
পে’পল এই সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখে তার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে দেয়। ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স জানিয়েছে, নতুন প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ফিনান্সিং পরিষেবা এখন সন্ত্রাসবাদীদের কাছে হয়ে উঠেছে নতুন হাতিয়ার। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি এখন অনলাইনে ছোটখাটো জিনিস বিক্রি করে, থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে বিস্ফোরকের যন্ত্রাংশ তৈরি করে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ডোনেশন সংগ্রহ করে অর্থ জোগান চালাচ্ছে। এর ফলে তাদের ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে, যেটা ট্র্যাক করা কঠিন। বিশেষ করে P2P পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়ো নাম, ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদে অর্থ লেনদেনের একটি বড় নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে।
ইউটিউবেও জাজবাত, আপডেট থাকুন আমাদের সঙ্গে
ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স রিপোর্টে আরও জানিয়েছে, এখনো কিছু কিছু দেশ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসবাদীদের সহায়তা করে চলেছে। যদিও নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এই রিপোর্ট সামনে আশার পর আবারো পাকিস্তানকে ‘গ্রে লিস্ট’-এ ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছে ভারত। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। বড়সড়ো আর্থিক সাহায্য এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহায়তা ছাড়া এই হামলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা।