স্ট্রাইক ক্ষমতা আরও জোরদার করতে চলেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। সেই লক্ষ্যে এবার নিজেদের যুদ্ধবিমানগুলিতে ইজরায়েলের তৈরি লং রেঞ্জ অ্যাটাক মিসাইল, অর্থাৎ LORA যুক্ত করার পরিকল্পনা নিচ্ছে এই বাহিনী। বর্তমানে ভারতের হাতে সুপারসোনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রহ্মোস রয়েছে। তবুও LORA-র প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ এটি সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি। বিকল্প নয়, বরং ব্রহ্মোসের পরিপূরক হিসেবেই দেখা হচ্ছে LORA-কে।
ইজরায়েল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরি LORA একটি কোয়াসি-ব্যালিস্টিক মিসাইল। এটি যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া যায় এবং এটি বিশেষত Su-30 MKI বিমানে ব্যবহারের জন্য উপযোগী। এর রেঞ্জ ৪০০ থেকে ৪৩০ কিমি পর্যন্ত। এটি ঘণ্টায় প্রায় ৬১৭৪ কিমি বেগে উড়তে পারে। এই মিসাইলের নির্ভুলতা এতটাই বেশি যে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সুযোগ ১০ মিটারের কম। ফলে নির্দিষ্ট কম্যান্ড সেন্টার, রাডার বা হাই ভ্যালু টার্গেটে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। ‘ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট’ প্রযুক্তির সাহায্যে একবার নিক্ষেপ করার পর এই মিসাইল নিজেই লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারে এবং মাঝপথে তথ্য আপডেটও নিতে পারে।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
২০২৫ সালের মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় পাকিস্তানের সুক্কুর বেসে ভারতীয় জাগুয়ার জেটের র্যাম্পেজ মিসাইল সফলভাবে আঘাত হানে। সেই সাফল্যই ইজরায়েল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজকে আরও উন্নত এবং দীর্ঘপাল্লার মিসাইল নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে, যার ফল হল LORA। যদিও ব্রহ্মোস মিসাইল ইতিমধ্যেই আকাশসেনার অস্ত্রভাণ্ডারে রয়েছে। কিন্তু তার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন, এটি একটি ভারী মিসাইল (প্রায় ২.৫ টন) এবং শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি বিমানে বিশেষ মডিফিকেশনের মাধ্যমে যুক্ত করা যায়। উপরন্তু, ব্রহ্মোসের দাম অনেক বেশি, প্রতি মিসাইলের জন্য প্রায় ২০-৩০ কোটি টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে, LORA তুলনামূলকভাবে হালকা, সস্তা এবং অধিক সংখ্যক বিমানে দ্রুত যুক্ত করা সম্ভব।
ব্রহ্মোস সাধারণত কম উচ্চতায় সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি দিয়ে উড়ে শত্রুর ডিফেন্স সিস্টেমকে ফাঁকি দেয়, যেখানে LORA উচ্চতায় উঠে উপর থেকে ট্র্যাজেক্টরি নিয়ে শত্রু ঘাঁটিতে আঘাত হানে। এই ধরনের মিসাইল রাডার ফাঁকি দিতে বেশি সক্ষম এবং শত্রুপক্ষের গভীরে ঢুকে স্ট্রাইক করতে পারে।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
পাকিস্তান এবং চিনের উন্নত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, যেমন চিনের HQ-9, IAF-এর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই প্রেক্ষিতে LORA-এর উচ্চগতি এবং উচ্চ ট্র্যাজেক্টরি এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে সঠিকভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছতে পারবে। এর ফলে সীমান্ত থেকে অনেক দূরে অবস্থিত পাকিস্তানের করাচি, রাওয়ালপিন্ডি বা চিনের এলএসি সীমান্তবর্তী ঘাঁটিতে আঘাত হানা সম্ভব হবে।
এই মিসাইল ভারতেই উৎপাদন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড এবং ইজরায়েল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ যৌথভাবে এই মিসাইল তৈরি করতে পারে। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা এবং ভবিষ্যতে মিসাইল রফতানির বাজারে ভারতের প্রবেশের পথ খুলে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।