সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী হয়ে ‘এক দেশ, এক কৃষি, এক দল’ তৈরির কেন্দ্রীয় ভাবনায় রাজি নয় রাজ্য সরকার। নির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে দেশজুড়ে একটি দল হিসেবে কাজ করে দেশের কৃষি ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বা স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষি ব্যবস্থা তৈরি করার যে লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান তাতে সহমত পোষণে রাজি নয় রাজ্যের কৃষি দফতর।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন “প্রত্যেক রাজ্যের নিজস্ব কৃষি নীতি আছে। এক একটি রাজ্যে কৃষি সহায়ক পরিবেশের তারতম্য রয়েছে। এই অবস্থায় সমস্ত রাজ্যগুলিকে একটি নির্দিষ্ট নীতির আওতায় এনে কৃষির উন্নয়ন সম্ভব নয়।” ইতিমধ্যেই কৃষি দফতরকে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন শুরু হয়েছে।
অভিযোগ, রাজ্য সরকার ও কৃষি দফতরের মন্ত্রী-সচিবদের সম্পূর্ণ এড়িয়ে রাজ্যের জেলাস্তরের কৃষি আধিকারিকদের সরাসরি রিপোর্ট করতে বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের তৈরি একটি সরকারি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জেলাস্তরের আধিকারিকদের যুক্ত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নবান্ন। রাজ্যের মতে, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী এবং রাজ্যের উপর একপ্রকার ‘প্রশাসনিক দখলদারি’। এই দখলদারি কোনমতেই বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানিয়েছে নবান্ন। আর দেশের সমস্ত কৃষি ব্যবস্থাকে এক ছাতার তলায় আনার যে চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক তা ‘প্রশাসনিক দখলদারি’ বলেই মনে করছে রাজ্য।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে কেন্দ্র রাজ্য কৃষি বিজ্ঞানী কৃষক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক বা শিল্প সংস্থাগুলিকে সংযুক্ত করে দেশজুড়ে একটি ইউনিফাইড কমিটি তৈরি করা হবে, যাদের মাধ্যমে কৃষি নীতি তৈরি করে গোটা দেশে একটি অভিন্ন কৃষি ব্যবস্থা তৈরি হবে। দেশের কৃষি ব্যবস্থা সার্বিক উন্নয়ন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষি ভবিষ্যৎ তৈরিতে দেশজুড়ে একটি দল হিসেবে কাজ করা হবে।
একই সঙ্গে নকল সার ও নকল কৃষি বীজের রমরমা রুখতে চালু আইনের বদলে আরো করা আইনি সংস্থানের কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী। সার্বিকভাবে দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে ‘এক ছাতার তলায়’ আনার প্রচেষ্টাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে পশ্চিমবঙ্গের মত কৃষি প্রধান রাজ্য। বৈচিত্র্যপূর্ণ আবহাওয়া, ভূ স্তর বা জলস্তর সমৃদ্ধ ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট নীতির মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন এক কথায় সম্ভব নয় বলে মনে করছেন রাজ্যের কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের এই ভাবনা কতটা কার্যকরী হতে পারে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজ্যের। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া “কৃষিক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ দেশের প্রথম সারির রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। তাহলে কেন্দ্র ঠিক কোন নজরদারি করতে চাইছে? নিয়ম মেনে সহযোগিতা করলে আমরা বাধা দিই না। কিন্তু সরাসরি হস্তক্ষেপ কখনওই বরদাস্ত করা হবে না। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের এই ভাবনা কখনওই রাজ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে না।”
আরও পড়ুন
নবান্নের প্রশাসনিক আধিকারিকদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ রাজ্যের প্রশাসনিক পরিকাঠামোকে পাশ কাটিয়ে একপ্রকার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার চেষ্টা। এই ঘটনা কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের চিরাচরিত প্রথা ভেঙে দেওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত বলেও মনে করছে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিকে রাজ্যে কৃষি প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যদিকে রাজ্যের কৃষি ব্যবস্থাকে নির্দিষ্ট নীতির অনুশাসনে বাঁধার চেষ্টা আখেরে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে নিরপেক্ষ এবং সম্মানজনক কাজের পরিবেশ বিঘ্ন ঘটাবে এবং রাজনৈতিক উত্তেজনাও বাড়তে পারে। আর এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের এই ঘটনাকে কোনমতেই আমল দিতে নারাজ রাজ্য সরকার।