বাংলাদেশে ভাঙা পড়ছে আরও এক ইতিহাস! ভেঙে ফেলা হচ্ছে স্মৃতি বিজড়িত বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমির বাড়িটি। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের হরিকিশোর রায় রোডে এই বাড়ি। এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। তথ্য বলছে, প্রায় দেড়শো বছরের পুরানো এই বাড়ি। বাড়িটির মালিক প্রয়াত জমিদার হরিকিশোর রায়। যিনি সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পালক পিতা। দীর্ঘ সময় সেই বাড়িতেই বসবাস করেছেন উপেন্দ্রকিশোর রায়। আর সেই ইতিহাস ভাঙা পড়তেই ক্ষোভ বাংলাদেশে।
সে দেশের বহু মানুষই এই বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। ইতিহাস যাতে না ভাঙা হয় সেই আবেদন জানানো হয়েছে। এমনকী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে বিষয়টিতে ভারত সরকার যাতে নজর দেয় সেই আবেদনও জানিয়েছেন।
রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন, ‘খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বয়ং স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিজড়িত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত। এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের’।
অফিশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখছেন, ‘রায় পরিবার বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। উপেন্দ্রকিশোর বাংলার নবজাগরণের একজন স্তম্ভ। তাই আমি মনে করি, এই বাড়ি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করব, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকার বিষয়টিতে নজর দিন’।
তবে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’তে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ইতিমধ্যে এই বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে। কেন বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে সেই সংক্রান্ত কাগজ তলব করেছে। এক আধিকারিক ওই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘রায় পরিবারের ঐতিহাসিক বাড়ি এটি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বাড়িটি এখনও তালিকাভুক্ত না হলেও সত্যজিৎ রায়ের বংশধরের বাড়ি হিসেবে শতবর্ষ প্রাচীন বাড়িটি ছিল’। ওই আধিকারিকের কথায়, এই সমস্ত বাড়ি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারে। তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, হরিকিশোর রায় ছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া জমিদারবাড়ির জমিদার। বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ। বহু ইতিহাস আজও বহন করে চলছে বাড়িটি। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি বাড়িটিকে ব্যবহার করা শুরু করে। একতলার ওই বাড়িটির সামনে ছোট একটি মাঠ আছে। একটা মনোরম পরিবেশ। তবে সম্প্রতি বাড়িটি ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে চারপাশ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে ওঠে। আর সেই কারনে নাকি ইতিহাস ভেঙে বহুতল তৈরির সিদ্ধান্ত বলে দাবি প্রকাশিত খবরে।
বাংলাদেশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনায় তৎপর হল ভারত সরকার। বাড়িটি ভেঙে ফেলার বদলে পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিক বাংলাদেশ সরকার বলে বিবৃতি দিয়ে জানাল কেন্দ্র। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও পরবর্তী প্রজন্মের সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি দুই দেশের কাছে অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। প্রয়োজনে বাড়িটির পুনর্নির্মাণকল্পে অর্থ সাহায্য করতে রাজি নরেন্দ্র মোদির সরকার বলে জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।