শুধু খাতায়-কলমে বিয়ের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা মানে মানসিক যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছু নয়! পর্যবেক্ষণে এবার একথাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। বিয়ের সম্পর্ক যদি শুধু কাগজে-কলমে টিকে থাকে, বাস্তবে না থাকে, তাহলে তা জোর করে টিকিয়ে রাখা মানে দু’জন মানুষকেই মানসিক কষ্টে ফেলে রাখা। এই মন্তব্য করে এক দম্পতির ১৬ বছরের পুরনো বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলায় স্বামীর ডিভোর্সের আবেদন মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ জানায়, “বিয়ে হল সম্মান, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সঙ্গীর সঙ্গে জীবন কাটানোর ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সম্পর্ক। যখন এই সমস্ত বিষয়গুলো একেবারে শেষ হয়ে যায়, তখন শুধু আইনগত বন্ধনের দোহাই দিয়ে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা কোনও মানেই হয় না।”
জানা গিয়েছে, এই স্বামী-স্ত্রী ২০০৮ সালে হিন্দু রীতিনীতি মেনে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের এক বছরের মধ্যেই সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং ২০০৯ সাল থেকে তাঁরা আলাদা থাকছেন। এরপর ২০১০ সালে স্বামী ডিভোর্সের জন্য আদালতে যান। কিন্তু ২০১৭ সালে পারিবারিক আদালত তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়। ২০১৯ সালে দিল্লি হাইকোর্টও সেই রায় বহাল রাখে।
এই সময়ের মধ্যেই স্ত্রী স্বামীর ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু প্রমাণের অভাবে খারিজ হয়ে যায় সেই মামলা এবং তাঁরা সবাই মুক্তি পান। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, “এই মামলায় দেখা যাচ্ছে, একটানা ১৬ বছর আলাদা থেকে এই দম্পতির মধ্যে কোনও রকম সহবাস বা দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে এই বিয়েটি আইনগত এবং বাস্তব উভয় দিক থেকেই মৃত বলে মনে করা হচ্ছে।”
এই বিবাহকে চূড়ান্তভাবে ভাঙতে সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে ডিভোর্স মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছে, “এই দম্পতি তাঁদের যৌবনের সেরা বছরগুলো কেবল মামলা-মোকদ্দমায় কাটিয়ে দিয়েছেন। এখন তাঁদের জোর করে একসঙ্গে থাকতে বাধ্য করা মানে শুধু মানসিক যন্ত্রণা বাড়ানো এবং নতুন করে মামলার সৃষ্টি করা।”
আদালত আরও জানায়, “যে স্ত্রীর স্বামী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যে নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কোনও যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।”