সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়— ৩০ বছর পর বিধি-নিষেধের গেড়োয় কলকাতায় একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবস কর্মসূচি। সমাবেশে যত বড়ই হোক না কেন ২১ জুলাই সকাল ন’টা থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত কলকাতার রাস্তাঘাটে কোন যানজট হবে না। এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা পুলিশকে এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে। বলে জানালেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। সকাল আটটার মধ্যে সভাস্থলের ৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সমস্ত মিছিল শেষ করতে হবে।
সকাল আটটা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে কলকাতার রাস্তাকে ভীর মুক্ত করবে পুলিশ। সকাল ন’টা থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত কলকাতার রাস্তা যান চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে হবে বলে জানিয়ে দিল কলকাতায় হাইকোর্ট। একুশ জুলাইয়ে রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের শহিদ দিবস কর্মসূচি থাকলেও সমস্ত অফিস যাত্রী এবং স্কুল পড়ুয়াড়া যাতে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে সময়মতো পৌঁছতে পারেন সেজন্যই হাইকোর্টের এই নির্দেশ। বস্তুত, ১৯৯৪ সাল থেকে যে রাজনৈতিক কর্মসূচি কলকাতায় পালিত হয়ে আসছে গত ৩০ বছরে এই প্রথম কোন ধরনের শর্ত বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হল।
২১ জুলাই এর শহীদ দিবসের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সেই বছর কলকাতা শহর যানজটের ফাঁসে অবরুদ্ধ হয়। অফিসযাত্রী থেকে স্কুল পড়ুয়া আইনজীবী থেকে বিচারপতি সকলকেই এই যানজটের ফাঁসে আটকাতে হয়। এই কর্মসূচির জন্য উদ্ভূত যানজট পরিস্থিতির মোকাবিলায় হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে মামলা দায়ের করে অল ইন্ডিয়া ল’ইয়ার্স ইউনিয়ন। এই মামলা বা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আদালত কে জানান রাজ্যের শাসকদলের আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য।
সম্পূর্ণ রাজনৈতিক মধু পুষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ২১ জুলাই কর্মসূচির ঠিক প্রাক্কালে জটিলতা তৈরি করতে এই ধরনের মামলা করা হয়েছে বলে জানান রাজ্যের শাসকদলের আইনজীবী। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন যে গত ৩০ বছর ধরে যে কর্মসূচি কলকাতায় পালিত হয়ে আসছে তার জন্য কলকাতা পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে। সাময়িক হলেও সার্বিকভাবে কলকাতা শহর যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে পরে বলে যে অভিযোগ তা সর্বাংশে সত্য নয় বলেও আদালত কে বোঝানোর চেষ্টা করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল।
বিচার প্রতিটি তীর্থঙ্কর ঘোষ সরকার পক্ষের কাছে জানতে চান আনুমানিক কত মানুষের সমাগম হতে পারে এই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। রাজ্যের শাসক দলের আইনজীবী জানান পুলিশ তথা মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী এবং বিগত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী প্রায় ১০ লক্ষ লোকের সমাগম হয় এই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। বিচারপতির বক্তব্য, এই বিপুল সংখ্যক মানুষের আনাগোনায় শহর কলকাতায় প্রাণ কেন্দ্রে যে একটা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা বলার অবকাশ রাখে না। সেক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ভিড় নিয়ন্ত্রণের বিধি থাকা প্রয়োজন। মামলাকরি আইনজীবী শামীম আহমেদ বেশকিছু স্কুলের বিজ্ঞপ্তি এবং বিগত দিনে হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের রেজোলিউশন উল্লেখ করে আদালত কে বোঝানোর চেষ্টা করেন এই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য প্রতিবছর অফিসযাত্রী বা নিত্যযাত্রীরা এবং স্কুল পড়ুয়াড়া তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে বাধা পান বা পৌঁছতে পারেন না।
একাধিক কুল এই দিনটিতে অঘোষিত ছুটি পালন করতে বাধ্য হয়। এই পরিস্থিতিতে আঁধার আদালতের হস্তক্ষেপ অবশ্যই প্রয়োজন এবং সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ আরোপের প্রয়োজন। যদিও সরকার পক্ষের আপত্তি সত্ত্বেও বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানিয়ে দেন বছর বছর এই ধরনের কর্মসূচির জন্য জটিলতা সৃষ্টি হওয়া কাম্য নয়। কত দিনে শুনানিতেই বিচারপতি ঘোষ এই রাজনৈতিক কর্মসূচি কেন ব্রিগেডে করা হবে না তা নিয়ে সওয়াল করেছিলেন।
এদিন এই মামলার নির্দেশ দেওয়ার সময় বিচারপতি ঘোষ জানান কলকাতা পুলিশের উপর তাঁর পূর্ণ আস্থা আছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার ২১ জুলাই কর্মসূচির জন্য যে রেগুলেশান জারি করেছেন তার প্রেক্ষিতেই বিচারপতি নির্দেশ দেন, সকাল ন’টা থেকে সকাল ১১ টা এই দুই ঘন্টা কলকাতার রাস্তাকে সম্পূর্ণ যানজট মুক্ত রাখতে হবে এবং সকাল আটটার পর্যন্ত রাস্তায় এই কর্মসূচির জন্য মানুষের মিছিল থাকতে পারবে। সকাল আটটার মধ্যে সভাস্থল থেকে পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসারদের মধ্যে কোথাও কোন ভিড় থাকবে না। কলকাতা শহরের রাস্তাকে যান চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে হবে কলকাতা পুলিশকে সাফ জানিয়ে দেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।