শেখ হাসিনা জমানার পর পরই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের উপর হিংসা, দমন-পীড়ন লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে বলে বারবার অভিযোগ করেছে দিল্লি। কিছু মানুষের মনোনয়নের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা মহম্মদ ইউনূসের প্রশাসন যাতে এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়, তার জন্য বারবার বলা হলেও সে ভাবে গুরুত্বই দেয়নি ঢাকা। এবার ইউনূস জমানায় ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিসর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশন। ট্রাম্প প্রশাসনের এই কমিশন বলেছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জীবন বিপন্ন। তারা স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণ করতে পারছেন না। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিভাজন অনেক ক্ষেত্রে আরও গভীর হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলন রাজনৈতিক পরিবর্তন হয় বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার জমানা শেষ হয়ে গঠিত হয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। সেনাবাহিনীর সমর্থনে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক মহম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করার পর শুরু হয় সংবিধান সংশোধন, আইন সংস্কার ও প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস। তবে হাসিনা জমানা শেষ হতেই সংখ্যালঘুদের উপর লাগাতার অত্যাচার শুরু হয় বাংলাদেশ জুড়ে। ২০২৫ সালের মে মাসে ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশনের প্রতিনিধিরা প্রশাসন সহ নানা স্তরের মানুষজনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁরা জানান, ইউনূস সরকার প্রকাশ্যে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিলেও সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছেন।
বাংলাদেশে সংবিধান, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইউনুস সরকার। কমিশনগুলিতে কোনও সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখা হয়নি বলে প্রশ্ন তুলেছে মার্কিন সংস্থাটি। বাংলাদেশে সংবিধান সংস্কারের অন্যতম বিতর্কিত প্রস্তাব হল, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুত্ববাদ’ শব্দের সংযোজন। এই প্রস্তাবকে সহাবস্থানের বার্তা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যদিও বিএনপির মতো দল পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় “সর্বশক্তিমানে আস্থা ও বিশ্বাস” বাক্যটি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি সংবিধানে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ শব্দ অন্তর্ভুক্তির পক্ষে মত দিয়েছে।
কমিশন মনে করেছে, এর জেরেই বাংলাদেশের জনজীবনে ধর্মীয় রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলির প্রভাব বাড়ার ইঙ্গিত মিলেছে। তারা জানিয়েছে, ইউনূস প্রশাসন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বৈষম্যের নিন্দা করলেও সরকার দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
Leave a comment
Leave a comment