বিহারে এসআইআর হওয়ার
পর শুরুতেই বাদ ৫৬ লক্ষ ভোটার। এবার নজরে পশ্চিমবঙ্গ? প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। বিহারের ভোটার তালিকায় এর মধ্যে অনেকেই জীবিত এবং বাস্তব ভোটার বলে দাবি করছেন পরিবার ও রাজনৈতিক নেতারা। এবং এই পদ্ধতিকে রাজনৈতিক অভিসন্ধি হিসেবে চিহ্নিত করছে বিরোধী শক্তি।
কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, এই সমীক্ষার উদ্দেশ্য মৃত, ভুয়ো ও অন্যত্র সরে যাওয়া ভোটারদের নাম তালিকা থেকে ‘ডিলিট’ করে দেওয়া। কিন্তু পদ্ধতি ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তৈরি হয়েছে জোরালো বিতর্ক। ইতিমধ্যেই দিল্লিতে সংসদের বাইরে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন বিহালের নির্বাচনের আগে যে পদ্ধতি অবলম্বন করছে সেটা আসলে কি এবং নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কোন কোন বিষয়গুলো প্রয়োজন হবে তা দেখে নেওয়া যাক।
- এসআইআর আসলে কী? ভোটার তালিকায় থাকা নামগুলির সত্যতা যাচাই করতেই এই প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের।
এই সমীক্ষা শেষবার রাজ্যগুলোতে হয়েছিল ২০০২–২০০৪ সালের মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গে হয়েছিল ২০০২ সালে, বিহারে ২০০৩ সালে।
এবার বিহারে আবার চালু হয়েছে এই সমীক্ষা। কেন্দ্রিয় নির্বাচন কমিশন বলছে ,
যাদের নাম ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় ছিল, তাঁদের নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু পরবর্তী ২২ বছরে যাঁরা তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রমাণ দিতে হবে নিজের পরিচয় ও নাগরিকত্বের। প্রশ্ন হল কোন কোন বিষয়গুলো নাগরিকত্ব প্রমাণের দাখিলা হিসাবে জমা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ১১ টি বিষয়ে বস্তুকে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যেকোনো নাগরিক প্রদান করতে পারবেন।
বিহারে নাগরিকত্ব প্রমাণের ১১ টি বিষয়
:::::::::::::::::::::::::::::::::::
১. কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের চাকরির পরিচয়পত্র
২. ১ জুলাই ১৯৮৭-এর আগের সরকারি নথি
৩. জন্ম শংসাপত্র
৪. পাসপোর্ট
৫. শিক্ষা বোর্ডের শংসাপত্র
৬. স্থায়ী বসবাসের শংসাপত্র
৭. এসসি/এসটি/ওবিসি শংসাপত্র
৮. এনআরসি তালিকায় নাম
৯. বনাধিকার শংসাপত্র
১০. সরকারি পারিবারিক রেজিস্টার
১১. জমির দলিল/পর্চা
তবে এক্ষেত্রে চলবে না আধার, রেশন কার্ড, ভোটার আইডি। নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, এই পরিচয়পত্রগুলি নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিকভাবে জল ঘোলা হলেও নির্বাচন কমিশন তার যুক্তি সাজিয়েছে। কমিশনের যুক্তি, এই ছাঁটাই একটি স্বচ্ছ ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। রাজনৈতিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সব থেকে বড় ‘স্টেক হোল্ডার’ রাজনৈতিক দলগুলি। নির্বাচন কমিশনের যুক্তির পাল্টা যুক্তি দিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলো।
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তর জানিয়েছে এসআইআর প্রক্রিয়ার জন্য রাজ্য ভিত্তিক নাগরিকত্ব প্রমাণের বৈধ পরিচয়পত্রের সংখ্যা বাড়তে পারে বা কমতেও পারে। বিহারে ১১ টি পরিচয় পত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যার রকম ফের হতে পারে বলেও মনে করছে সিইও দপ্তর। সিইও দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে বিএলও-দের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। সিইও দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকেই এরাজ্যে SIR নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আসন্ন স্বাধীনতা দিবসের পর থেকেই রাজ্যে SIR প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল জানিয়েছেন,
“নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রাজ্য এসআইআর প্রক্রিয়ার জন্য বিএলও প্রশিক্ষণ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে। জেলায় জেলায়
বিএলও নিয়োগের কাজও প্রায় শেষ। কমিশন যেভাবে নির্দেশ দেবে সেই অনুযায়ী এ রাজ্যেও এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।”
যদিও এই SIR প্রক্রিয়া নিয়ে একগাদা প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি।
- এত বড় প্রক্রিয়া মাত্র এক মাসে শেষ করা সম্ভব?
- পরিযায়ী শ্রমিকরা কীভাবে প্রমাণ দেবে?
- ২২ বছরের পুরনো তালিকা যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তবে এত নথি কেন?
যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে শেষ এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে,
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এখানেও যদি নতুন সমীক্ষা হয়, তবে ২০০২-এর তালিকায় নাম থাকলেই ‘নিরাপদ’। অন্যথায় দিতে হবে নথি। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, নির্বাচনের আগে তাড়াহুড়ো করে এই ধরনের প্রক্রিয়া করার ‘বদ মতলব’ থাকতে পারে কমিশনের। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশকিছু মানুষ ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছেন। কিন্তু তাদের হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। বাংলা বললেই বাংলাদেশী হিসাবে চিহ্নিত করে সরকারিভাবে ‘পুশব্যাক’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ করছেন। “বাংলা বললেই বাংলাদেশী? তাহলে বাংলা বলা কি অপরাধ?” প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আধার, ভোটার কার্ড দেখিয়েও ভিন রাজ্যে যাওয়া বঙ্গের মানুষদের নিস্তার নেই। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কেন্দ্রীয় নির্বাচনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।