বোলপুর থানার আইসিকে মারধরের হুমকি ও মহিলাদের প্রতি কটূক্তি নিয়ে অনুব্রত মণ্ডল ও বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের কথোপকথনের ভিডিও ভাইরাল বিতর্কের পর প্রথমবার বীরভূমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সন্ধ্যায় দু’দিনের বীরভূম সফরে বোলপুরে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ মমতার ধারে কাছে দেখা গেল না একদা বীরভূমে বাঘে-গোরুতে একঘাটে জল খাওয়ানো অনুব্রত মণ্ডলকে। বোলপুরের রাঙাবিতান অতিথি নিবাসে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা বীরভূমের কোর কমিটির চেয়ারপার্সন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সহ কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ, অভিজিৎ সিংহ, অসিত মাল, বিকাশ রায়চৌধুরী। যদিও রাঙাবিতান চত্বরে খোঁজ মেলেনি অনুব্রত মণ্ডল বা তাঁর অনুগামীদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙাবিতানে মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার আগেই অনুব্রত মণ্ডলের গাড়ি দেখা গিয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছতেই তাকে স্বাগত জানাতে বা ধারে কাছে দেখা মেলেনি অনুব্রতর। এর আগেও একই ছবি দেখা মিলেছে কলকাতার ধর্মতলায় একুশের সভা মঞ্চে। গত ২০ জুলাই যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশের সভামঞ্চ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, তখন সেখানে হাজির ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি কিছু কথা বলতে চান বলে জানিয়েছিলেন কর্তব্যরত নিরাপত্তা রক্ষীদের। যদিও মমতা সভার স্থলে প্রবেশ করার মুহূর্তে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরাই অনুব্রতকে সভাস্থল থেকে সরিয়ে দেন। জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীরা কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের জানান অনুব্রত মণ্ডলকে সভাস্থল থেকে মমতা ঢোকার আগেই সরিয়ে দেওয়ার কথা জানান। সেই মতোই একুশের প্রস্তুতির সভায় মঞ্চে উপস্থিত হয়েও মমতার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি অনুব্রত। পরে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানানো হয়, আচমকা অসুস্থতা বোধ করায় কলকাতা থেকে বোলপুরে ফিরে আসেন বীরভূমির কেষ্ট। রবিবার সন্ধ্যায় বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী যখন পৌঁছেছেন তখনও একই ছবির পুনরাবৃত্তি ঘটল। রাঙাবিতান অতিথি বাসের ধারেকাছে খোঁজ মিলল না কেষ্টর। মমতা-কেষ্টর এই দূরত্ব রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বীরভূম জেলার দলীয় সংগঠনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মমতা। কয়েক মাস আগে রাজ্যজুড়ে সমস্ত জেলায় তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদল করা হলেও বীরভূমে কোনও সাংগঠনিক রদবদল করা হয়নি তৃণমূলের পক্ষ থেকে। বীরভূমের কোর কমিটি যেখানে অনুব্রত মন্ডল ও কাজল শেখ দুজনেই রয়েছেন তাদেরকে হাতে হাত মিলিয়ে বীরভূমের দলীয় তথা উন্নয়নের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা। বীরভূমের কোর কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব বহাল থাকে রাজ্যের ডেপুটি স্পিকার তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে অনুব্রত শুধুই বীরভূমের কোর কমিটির একজন সাধারণ সদস্য। দলনেত্রীর নির্দেশের পরও অনুব্রত-কাজলের রাজনৈতিক দ্বন্দ লেগেই ছিল তা বলাই বাহুল্য। শেষ পর্যন্ত কাজল শেখের একটি রাজনৈতিক সভাকে কেন্দ্র করে বোলপুরের আইসিকে কদর্য ভাষায় অনুব্রতর আক্রমণের কথোপকথন ভাইরাল হয়। এই ভাইরাল কথোপকথন রাজ্যের পুলিসি ব্যবস্থা তথা প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে জাতীয় স্তরেও যথেষ্ট জলঘোলা হয়। বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রাজ্য প্রশাসন তথা মুখ্যমন্ত্রীকে। রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর বীরভূম সফরে অনুব্রতর অনুপস্থিতি নতুন করে রাজ্য রাজনীতির জল আরও ঘোলা করবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ব ঘোষিত বীরভূম সফরে মূলত থাকছে প্রশাসনিক বৈঠক। আগামীকাল বোলপুরে এই প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি বীরভূম জেলার দলীয় কোর কমিটির নেতৃত্বের সঙ্গেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং আগামী দিনে দলীয় কর্মসূচি বা কর্মপন্থার রুপরেখা তৈরি করতে বিশেষ বৈঠক করার কথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যাবতীয় বৈঠক শেষে সোমবার বীরভূমে একটি ভাষা মিছিল করবেন মমতা। দেশের বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে যেভাবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষজনের উপর নির্যাতন বা নিপীড়ন করা হচ্ছে এবং তাদেরকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে পুশব্যাক করার চেষ্টা চলছে তার প্রতিবাদে নতুন করে ভাষা আন্দোলন করার ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই কলকাতার রাজপথে ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং বাংলা ভাষা বাঁচাও এর ডাক দিয়ে মিছিল করেছেন। তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বীরভূমের রাঙামাটিতে এবং রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত শান্তিনিকেতনের পুণ্যভূমি থেকে নতুন ভাষা আন্দোলনের মিছিল করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কলকাতায় ফেরার পথে ইলামবাজারের কাছে একটি কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বলে জানা গেছে।