উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিনক্ষণ জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। আর তারপরই এই নির্বাচনে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান কি হবে, তাই নিয়ে ফের শুরু হয়েছে জল্পনা। আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর জগদীপ ধনখড়ের ছেড়ে আসা উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন। লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদরাই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার। কিন্তু তৃণমূল সাংসদরা কি করবেন ? ভোট দিলে কোন তরফের প্রার্থীকে দেবেন ? নাকি ভোটদানে বিরত থাকবেন, এইসব প্রশ্ন নিয়ে ফের চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। না হবার কোন কারণও নেই। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীন জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকার ও শাসকদলের ‘সম্পর্ক’ সুবিদিত। রাজভবনের সঙ্গে নবান্ন বা তৃণমূল ভবনের দ্বৈরথ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু সেই জগদীপ ধনখড় যখন উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হলেন, তখন বিরুদ্ধে ভোট না দিয়ে ভোটদানে বিরত থেকেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গেরুয়া শিবির দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রার্থী করলে, তিনি আদিবাসী এবং মহিলা, এই যুক্তি দেখিয়ে বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভার বদলে বিজেপি প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছিল তৃণমূল। তাই এবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোন শিবির কাকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করায়, সেই বিষয়ের পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি অবস্থান নেবেন, তাই নিয়েও আগ্রহ তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
সংখ্যার হিসেবে অবশ্য জেতার মতো প্রয়োজনীয় সাংসদ বিরোধী শিবিরের নেই। লোকসভায় ৫৪২ সদস্যের মধ্যে এনডিএ শিবিরের সাংসদ ২৯৩, বিরোধীদের ২৩৪। অন্যদিকে রাজ্যসভায় ২৪০ সদস্যের মধ্যে এনডিএ শিবিরে রয়েছেন ১৩০ জন, বিরোধী শিবিরে ৭৯। মোট ৭৮২ সাংসদের মধ্যে এনডিএ শিবিরে আছেন ৪২৩ জন, বিরোধী শিবিরে ৩১৩। অর্থাৎ সংখ্যার বিচারে এমনিতেই শতাধিক ভোটে এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির।
কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচনে সরকার পক্ষকে যে ওয়াকওভার দিতে নারাজ, তা আগেই জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। ইন্ডিয়া ব্লকের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আগামী ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত্রে ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের নিজের বাড়িতে নৈশভোজের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। সেই দিনই বিরোধী শিবিরের প্রার্থী কে হবেন তাই নিয়ে আলোচনা হবে। জজবাত বাংলাকে এক তৃণমূল সাংসদ জানিয়েছেন, প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে তৃণমূলনেত্রী যা নির্দেশ দেবেন, সেটাই জানিয়ে দেওয়া হবে ওই বৈঠকে। তবে কংগ্রেস সূত্রের খবর, ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী কাকে করা যায়, তাই নিয়ে আলোচনা হলেও নাম ঘোষণা করা হবে না। বিরোধী শিবির অপেক্ষা করবে আগে সরকার পক্ষ তাদের প্রার্থী হিসেবে কার নাম চূড়ান্ত করে। তারপর ইন্ডিয়া ব্লক তাদের সিদ্ধান্তের কথা সামনে আনবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় বিরোধী শিবির যশোবন্ত সিনহাকে প্রার্থী করলেও, বিজেপি যখন ওড়িশার আদিবাসী নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করে, তখন তৃণমূল নেত্রী তাঁকেই ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। সেই জন্যই কি এইবার কংগ্রেস সরকার পক্ষের প্রার্থীর নাম ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে চাইছে ? উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের হার সংখ্যার বিচারে নিশ্চিত হলেও, বিরোধী ঐক্য কতটা বজায় থাকে, সেটা নিয়েই আগ্রহ রাজনৈতিক মহলে।