দেরিতে হলেও অবশেষে বোধোদয়। ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৫ এর শেষ পর্যায়ে এসে ঘরে ঘরে নারী ব্রিগেড বলা ভালো ‘মেয়েদের ব্রিগেড’ তৈরির ডাক দিল সিপিআইএম। স্বাধীনতা দিবসে নয়া উদ্যোগ রাজ্যের প্রাক্তন শাসকদলের। রাজ্যে জুড়ে এই বার্তা এখন ভাইরাল হয়েছে।
মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, দীপ্সিতা ধর সহ সিপিআইএম নেত্রীরা এই নারী ব্রিগেডে যোগদান করার আহ্বান জানাচ্ছেন সমাজমাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া লিংক খুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের মহিলাদের জন্য। ওই লিংকে ক্লিক করলেই সদস্য হওয়া যাবে সিপিআইএমের নারী ব্রিগেডে।
বাংলার মেয়েদের নিরাপত্তা জোরদার করতে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এবং অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় গ্রামে-শহরে তৈরি হবে সিপিআইএমের এই মহিলা ব্রিগেড।
আর সমাজ মাধ্যমে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এই মহিলা ব্রিগেডের সদস্য হওয়ার জোরদার প্রচার চালাচ্ছেন সিপিআইএমের নেত্রীরা।
সাধারণভাবে বামপন্থীরা দাবি করে থাকেন যে তাঁদের দলের সদস্য হওয়া সহজ কথা নয়। তবে এবার তাঁরাই সমাজমাধ্যমে লিংক দিয়ে সেখানে নির্দিষ্ট কোড স্ক্যান করে নারীদের ব্রিগেড প্ল্যাটফর্মে সদস্য হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা, ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মহিলাদের মধ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়ে নিতে সমাজ মাধ্যমে এই নারীদের ব্রিগেড তৈরির কর্মসূচি চালু করেছে সিপিআইএম।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের জমানায় মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে মহিলাদেরই সুরক্ষা নেই। এই সুর তুলে মহিলাদের সুরক্ষার বিষয়ে এই বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপিআইএম নেত্রীরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এত দেরিতে উদ্যোগ নিয়ে চিঁড়ে ভিজবে কি?
রাজ্যে টানা সাড়ে তিন দশক ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিআইএমের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি মহিলা ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করত। ২০১১ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই সিপিআইএমের অন্যান্য সংগঠনের মতোই এই মহিলা সমিতির ক্ষমতা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। কৃষক শ্রমিক সংগঠন ব্যাংক বীমা চিকিৎসা পরিষেবার মতো প্রতিষ্ঠানে বামপন্থী ইউনিয়নের কিছুটা শক্তি অবশিষ্ট থাকলেও, মহিলা সংগঠন অতীতের ছায়া মাত্র। বরং সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
তৃণমূলের সবকটি শাখা সংগঠনে এখন ভরা জোয়ার। পাশাপাশি একাধিক সরকারি জনহিতকর প্রকল্পে মহিলাদের অধিকারকেই অগ্রাধিকার দিয়ে মাস্টার স্ট্রোক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে স্বাস্থ্য সাথী, কন্যাশ্রী থেকে বিধবা ও বার্ধক্য ভাতা, সম্প্রদায় ধরে ধরে ঘরের মহিলাদের মানোন্নয়নে একাধিক প্রকল্প এবং আর্থ ও সামাজিক মানোন্নয়নে সার্বিকভাবে মহিলাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লাগাতার প্রচার চালিয়ে বামপন্থী মহিলা সংগঠন এবং তাদের অতীত ইতিহাসকে অনেকটাই পিছিয়ে দিতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাভাবিকভাবেই নিম্ন মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক খেটে খাওয়া মজদুর মহিলা থেকে গৃহস্থের “লক্ষ্মী” সকলের কাছে যেভাবে মমতার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে সেখানে গত ১৪ বছরে সিপিআইএমের মহিলা নেত্রীদের প্রভাব অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাই সমাজ মাধ্যমে এভাবে মহিলা সদস্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে প্রাক্তন শাসকের ভাগ্যে তা নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাই।
প্রসঙ্গত, বিধানসভার বিরোধী দল বিজেপি তাদের সদস্য সংগ্রহের জন্য ‘মিসকল’ পদ্ধতি চালু করে। সে কারণে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং প্রাক্তন শাসকদল সিপিআইএম রাজ্য বিজেপিকে ” মিসকলের পার্টি ” বলে কটাক্ষ করে। এবার সমাজ মাধ্যমে লিংক দিয়ে নির্দিষ্ট কোড স্ক্যান করে সদস্য সংগ্রহের যে উদ্যোগ নিয়েছে সিপিআইএম তাকে
“সোশ্যাল মিডিয়া পার্টি ” বলে কটাক্ষ শুরু হয়েছে রাজ্যের শাসক-বিরোধী দু’পক্ষ থেকেই। বর্তমান রাজ্য-রাজনীতিতে মহিলা ভোটব্যাঙ্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের আগ্রাসন বলার অপেক্ষা রাখে না। এই পরিস্থিতিতে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে ছাব্বিশের নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের মহিলা ভোটব্যাঙ্কে কতটা থাবা বসাতে পারবে প্রাক্তন শাসক তা বলা মুশকিল।
সেই সঙ্গেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা যখন কন্যা সুরক্ষা যাত্রার মাধ্যমে জনভিত্তি আরও মজবুত করতে চাইছেন, তখন সিপিএমের এই মহিলা ব্রিগেড তৈরির উদ্যোগ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।