জগদীপ ধনখড়ের দুই বছরের কিছু বেশি সময় মেয়াদের পর রাজ্যসভার চেয়ারম্যান পদে বসার জন্য উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বিজেপি বেছে নিয়েছে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্র – সিপি রাধাকৃষ্ণণ। পদাধিকার বলে উপরাষ্ট্রপতিই রাজ্যসভার চেয়ারম্যান।
রাজনৈতিক মহল বলছে, ধনখড়ের ‘কঠোর, দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট’ ভাবমূর্তির জায়গায় রাধাকৃষ্ণনের ‘মৃদু, সর্বজনগ্রাহ্য’ চরিত্র সামনে আনতে চাইছে বিজেপি।
২০২২ সালে জাঠ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উপরাষ্ট্রপতি পদে ধনখড়কে বেছে নিয়েছিল বিজেপি। দল জাঠ সমাজকে বার্তা দিতে চেয়েছিল যে, তারা দেশের ক্ষমতা কাঠামোর অংশ। সেই প্রেক্ষাপটে ধনখড়ের নিয়োগ ছিল কৌশলী, তবে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর ‘আক্রমণাত্মক আইনজীবী’ চরিত্র পরে সংসদের আলোচনায় বারবার অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি করে। দিনের পর দিন অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেন বিরোধী সাংসদরা। নজিরবিহীনভাবে শতাধিক সাংসদ কে রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করে দিয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে, সিপি রাধাকৃষ্ণণের রয়েছে দীর্ঘকালীন আরএসএস ও জনসংঘ-যোগ, মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকেই তিনি হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তামিলনাড়ুর রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রাধাকৃষ্ণণকে দক্ষিণ ভারতে বিজেপির সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সিপি রাধাকৃষ্ণণ মূলত ওবিসি সম্প্রদায় থেকে আসা। আর বিজেপির সাম্প্রতিক রাজনীতিতে ওবিসি ভোটব্যাঙ্কের গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। কর্নাটক ছাড়া দক্ষিণ ভারতে এখনও পর্যন্ত তেমন সাফল্য পায়নি বিজেপি, সেই ঘাটতি পূরণেই রাধাকৃষ্ণণকে সামনে আনা হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তামিলনাড়ুতে ডিএমকের বিরুদ্ধে তিনি নীরব কিন্তু কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন। উদয়নিধি স্ট্যালিনের ‘সনাতন ধর্ম’ বিরোধী মন্তব্যের পর তাকে ‘শিশু’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে বিতর্ক প্রশমিত করার কৌশল নিয়েছেন তিনি। অথচ ধনখড় যেখানে যেতেন, বিতর্কও তাঁর সঙ্গে যেত।
বাদল অধিবেশন শুরুর দিনই ধনখড় পদত্যাগ করেন। যদিও তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে পদ ছাড়ার কথা বলেন, তবে পরে জানা যায়, বিরোধীদের আনা বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই তিনি অনুমোদন করায় ক্ষুব্ধ হয় বিজেপি নেতৃত্ব।
ধনখড়ের বিদায় ছিল হঠাৎ, কিন্তু তা আসলে বিজেপির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। বিশেষত রাজ্যসভায় সমন্বয় এবং কার্যকারিতা রক্ষার দিক থেকে।
রাধাকৃষ্ণণের এই নিয়োগে বিজেপি একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে – রাজ্যসভার মতো উচ্চকক্ষের দায়িত্বশীল পদে প্রয়োজন ভারসাম্যপূর্ণ, আদর্শনিষ্ঠ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব। যেখানে আগের চেয়ারম্যান রাজনৈতিক সংঘর্ষের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন, নতুন চেয়ারম্যান হতে পারেন সংলাপ ও আলোচনার নতুন মুখ। এমনটাই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।