শুরুতে নাম ছিল দ্যা দিল্লি ফাইলস, আচমকা বদলে তা হয়েছে দ্যা বেঙ্গল ফাইলস। পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর মুক্তি পেতে চলা হিন্দি ফিল্ম, দ্যা বেঙ্গল ফাইলস ঘিরে এখন বিতর্ক তুঙ্গে। বিবেক অগ্নিহোত্রীর ফিল্ম এবং বিতর্ক অবশ্য এই প্রথম নয়। পরিচালকের ফাইলস সিরিজের আগের দুটি ছবি, দ্যা তাসখন্দ ফাইলস এবং দ্যা কাশ্মীর ফাইলস-এর মুক্তি ঘিরেও এমন বিতর্ক দেখা গিয়েছিল দেশজুড়ে।
আগামী ৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে দ্যা বেঙ্গল ফাইলস। পরিচালকের এই ফিল্মটি ঘিরে শুধু নাম বদলের বিতর্কই নয়, বিতর্ক রয়েছে অন্যতম প্রধান চরিত্রে থাকা গোপাল মুখার্জির উপস্থাপনা ঘিরেও। কলকাতায় ছবির ট্রেলার লঞ্চে তাই বিতর্ক চরমে ওঠে। ট্রেলার লঞ্চ না করেই ফিরে যেতে হয় টিম দ্য বেঙ্গল ফাইলস-কে। এই ছবিকে ঘিরে হয়েছে একাধিক এফআইআর। একই সঙ্গে গোটা পরিবারের অসম্মানের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবিতেও আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন গোপাল মুখার্জির নাতি শান্তনু মুখার্জি।
কলকাতার পর দিল্লিতে ট্রেলার প্রদর্শনের অনুষ্ঠানে, ফিল্মের নাম বদল ঘিরে নিজেদের বক্তব্য পেশ করেছেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। বলেছেন, ১৯৪৬ সালের গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস এবং নোয়াখালি দাঙ্গার কাহিনী এই ছবির পটভূমি। তার জন্যেই পরে ফিল্মের নাম বদলানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাই আগে নাম দ্য দিল্লি ফাইলস পরিবর্তন করে, নতুন নামকরণ করা হয় দ্যা বেঙ্গল ফাইলস।
গোপাল পাঁঠার উপস্থাপনা ঘিরে বিতর্কেরও উত্তর দিয়েছেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। বলেছেন, তাঁর ফিল্মে গোপাল পাঁঠা একটি অনুপ্রাণিত চরিত্র কিন্তু ফিল্মের কেন্দ্রবিন্দুতে নন। বলেন, গোপাল মুখার্জিকে নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার বিবিসিতে রয়েছে । শান্তনু মুখার্জির দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে, তিনি যা যা বলেছেন, আমরা কেবল ততটুকুই দেখিয়েছি।”
পারিচালক আরও বলেন, “গোপাল মুখার্জির জীবন, রাজনীতির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি একজন নায়ক ছিলেন এবং আমি তাঁকে একজন নায়ক হিসেবেই দেখিয়েছি। আমি গোপাল মুখার্জিকে অনেক সম্মানও করি। তাঁর নাতিরা বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সেখানে একটা বাধ্যবাধকতা আছে। যার কারণে তাঁরা আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। আমরাও এর আইনি জবাব দিচ্ছি”।
কলকাতায় ট্রেলার প্রদর্শন ঘিরে বিক্ষোভ-আশান্তি-এফআইআর নিয়ে শান্তনু মুখার্জির বক্তব্য ছিল, তাঁর দাদুর চরিত্রটি যথেষ্ট আপত্তিজনক ও অবমাননাকর হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে দ্যা বেঙ্গল ফাইলস-এ। ট্রেলারে বলা হয়েছে “এক থা কসাই গোপাল পাঁঠা”। গোপাল মুখার্জি ছিলেন কুস্তিগির এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। অনুশীলন সমিতির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও। তাঁর প্রয়াত দাদু কিংবা পরিবারের কেউই কসাই ছিলেন না। বলেছেন, চরিত্রটি উপস্থাপনের আগে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে এই বিষয়ে পরিচালক কিংবা তাঁর টিম কেউ কোনও যোগাযোগও করেননি।
দ্য বেঙ্গল ফাইলসের ট্রেলারের অংশে রয়েছে লাল তিলক পরা, দেবী কালীর একটি মূর্তির সামনে বসে আছেন গোপাল পাঁঠা। জন সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন তিনি। তিনি বলছেন, “ভারত হিন্দুওঁ কা রাষ্ট্র হ্যায়। পার ইস যুদ্ধে হিন্দু হার রাহে হ্যায়। অর জিত কৌন রাহা হ্যায়? জিন্নাহ। কিউঁকি হাম সব নাশে মে চুর হ্যায়, আর ইসস নাশে কা নাম হ্যায় গান্ধী কি অহিংসা”।
দ্য বেঙ্গল ফাইলস-এ গোপাল পাঁঠার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন একদা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ অভিনেতা সৌরভ দাস। বিতর্কের প্রেক্ষিতে তিনি এখন ছবিটি থেকে নিজেকে কিছুটা আড়ালে রেখেছেন। এক বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে অভিনেতা সৌরভ দাস বলেছেন, “আমি কেবল আমার চরিত্রটি সম্পর্কেই জানতাম। স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে আগে জানতাম না। আজকাল এভাবেই কাজ হয়।” তিনি আরও বলেন, ফিল্মে এটি একটি খুব শক্তিশালী চরিত্র যার চরিত্রায়নের জন্য তাঁর কাছে প্রস্তাব এসেছিল। তিনি তা গ্রহণ করেছেন। বলেন, এটি একটি হিন্দি ছবি যেখানে সারা দেশের তারকা অভিনেতারা কাজ করেছেন। ছবিতে তাঁদের তুলনায় তিনি নিতান্তই নগণ্য। অভিনেতার আরও দাবি, “আমি যদি একদিন হিটলারের চরিত্রে অভিনয় করি, তবে তা আমাকে কখনই নাৎসি সমর্থক হিসেবে তুলে ধরে না।”